আত্মীয়করনের উল্লাসের বলী হলেন সাঈদ খোকন, একই পরিবারে যুবলীগ ও সিটি কর্পোরেশন!!! সামাদ আজাদ পুত্র ডনের কি কোনো যোগ্যতা নেই?
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪১:৩৬,অপরাহ্ন ০৬ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ১২৫৫৭০ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
সব সম্ভবের দেশ নাকি বাংলাদেশ, কে বলেছিলো কথাটি জানিনা। তবে যে বা যিনি বলেছিলেন তিনি দেশটির মানুষের চরিত্রের সাথে মিশে গিয়েছিলেন, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এ দেশের মানুষ সব পারে। রাজনৈতিক নেতারা তো আরো বেশী পারেন। দিনকে রাত করতে পারেন, রাতকে দিন করতে পারেন। সম্প্রতি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মনোয়ন নিয়ে সাঈদ খোকনের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কানামাচি খেলার অবসান হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে শেখ ফজলে নুর তাপসের হাতে মনোয়ন তুলে দিয়েছেন। এর আগে যুবলীগের নেতৃত্বও তিনি তুলে দিয়েছেন তাপস সাহেবের বড় ভাই পরশ সাহেবের হাতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন সব দেখাশুনা করেন। কারন তিনি মমতাময়ী নেত্রী, তিনি যা ভালো মনে করেন তাই করেন। সাঈদ খোকন সাহেব মনোয়ন জমা দেয়ার আগে আবেগতাড়িত হয়ে ঢাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার দিন শেষ হয়ে আসছে। কেন দিন শেষ হলো? সাঈদ খোকন নাকি ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নগরবাসী নাকি তাকে খুব একটা ভালো পায়না, তার মধ্যে নাকি কোনো ক্যারিশমা নেই, তিনি নাকি কমিশন খান, কিছু কাউন্সিলর তো শ্লোগানও দিয়েছে কমিশন খাওয়া মেয়র চাইনা। আমার কথা হচ্ছে কমিশন কে খায়না? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন আওয়ামীলীগে তাকে ছাড়া সবাইকে কেনা যায়! সম্পত্তি কার নেই? তারেক রহমান সাহেবের বাবা জিয়াউর রহমান সাহেব ভাঙ্গা সুটকেস রেখে গিয়েছিলেন, সেই সুটকেস থেকে কত হাজার কোটি টাকা বের হয়েছে, এসব অনেকদিন শুনলাম, এখন তো শুনি এক ক্যাসিনো ব্যবসা করে হাজার কোটি টাকা কামাই করে ফেলেছে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। বাংলাদেশ ব্যংকের রিজার্ভ চুরি, হলমার্ক, ডেস্টিনি শেয়ার মার্কেট কোনো কিছুরই তো জবাব নেই। যে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন তাকে ছাড়া তার দলের সবাইকে কেনা যায়, যে দেশের অর্থমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন পুকুর চুরি নয় সাগর চুরি হচ্ছে, সেই দেশের নেতৃত্ব থেকে কি আশা করবে মানুষ? চুরি নিয়ে কথা না বলা ভালো। চুরি সবাই করবে। এটা বাংলাদেশের নেতা মন্ত্রী এমপিদের আমলাদের পেশা। ওরা পেশাদার চুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও চুর! মাঝে মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লোক দেখানো কিছু ধর পাকর করেন, মানুষকে দেখান, দেখ আমি কত সৎভাবে সরকার পরিচালনা করছি, এই সব নাঠকের কোনো দরকার আছে কি? মানুষ কি এতই বোকা যে কিছুই বুঝেনা? মানুষ সবই বুঝে কিন্তু কিছু বলেনা, কারন বললেই তো তার উপর নেমে আসবে অত্যাচার। এই যে আমি লন্ডনে বসে এসব লিখছি কারন এটি লন্ডন, ঢাকা শহরে অথবা বাংলাদেশে বসে এসব লিখলে সেই কবে আমাকে সাইজ করে ফেলতো আওয়ামীলীগের লোকেরা, যুবলীগের ছেলেরা, ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা। এমনিতেই সাইজ করে ফেলছে অনেকটা। সে যাক, সাঈজ যে কতরকম করে, সাঈদ খোকন মনোয়ন পাননি, শুনেছি, সত্য মিথ্যা জানিনা যেদিন থেকে তিনি মনোয়ন পাননি সেদিনের পর থেকে তার বাসার সামনে নাকি কিছু বালি ছিল এগুলো সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মনোয়ন পাবার পর ফজলে নুর তাপস সাহেবকে নিয়ে কি হাসি খুশী কি উচ্চাস, এক ব্যারিস্টার তিনি সারাক্ষণ ফেইসবুকে লাইভ করেন, ফেইসবুক লাইভ করেই তিনি অনেকটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন বাংলাদেশে। তিনি আমেরিকায় তার পরিবারকে রেখে আসছেন, বলেছেন নিরাপদে থাকার জন্য তাদেরকে রেখে যাচ্ছেন। তিনি লাইভে সাঈদ খোকনের সমালোচনা করেছেন। কি সমালেচনা, সাঈদ খোকন নাকি কান্নাকটি করছেন মনোয়নের জন্য। ঐ ব্যারিষ্টার সাহেব তাপস সাহেবকে খুশী করার জন্য অথবা আওয়ামী হাইকমান্ড কে খুশী করার জন্য সাঈদ খোকনের কান্নাকাটি নিয়ে কথা বলেছেন। আমি সাঈদ খোকন সাহেবের বক্তব্য শুনেছি সেখানে তিনি আবেগতাড়িত হয়েছেন, সেটা হতেই পারেন। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে যে দিন ডাউনিংষ্ট্রীটের সামনে পদত্যাগ করার কথা ঘোষনা করেছিলেন তখন তিনি অনেকটা আবেগ তাড়িত হয়ে বলেছিলেন “আই লাভ মাই কান্ট্রি“ সাঈদ খোকন মনোয়ন পাবেননা তিনি জেনে ফেলেছিলেন, জেনে শুনে তিনি বলেছেন আমি এই কঠিন সময়ে ঢাকা-বাসীর সহযোগিতা চাই, দেশবাসীর দোয়া চাই, এই তো বক্তব্য, সেখানে ঐ ব্যারিষ্টার সাহেব কান্নকাটির কি দেখলেন আমি তো বুঝলামনা।
সে যাক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন যেভাবে সব কিছু আত্মীয়করন করছেন তাতে আমি শংকিত। নিজের ছেলেকে বানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা, মেয়ে আরো কি, বোনের ছেলে ববিকে নাকি এখন তাপস সাহেবের ছেড়ে দেয়া আসনে এমপি বানানোর খায়েশ। আমি জানিনা শেষ পর্যন্ত কি হবে। একুশে গানের রচিয়তা আব্দুল গাফফার চৌধুরী সাহেব একবার লন্ডনে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্রো মারা যাওয়ার পর উপমহাদেশের হত্যার রাজনীতি শীর্ষক এক আলেচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন “বঙ্গবন্ধু দুই দিন আগে মারা গেছেন দুই দনি পরে শেখ মনিই তাকে হত্যা করতো“ আমি তখন ঢাকা থেকে প্রকাশি দৈনিক আমাদের সময়ে সে নিউজটি পাঠিয়েছিলাম, আমি তখন লন্ডন প্রতিনিধি ছিলাম দৈনিক আমাদের সময়ের। নাঈমুল ইসলাম খান তখন পত্রিকাটির সম্পাদক, নাঈম ভাই নিউজটি পেয়ে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন গাফফার ভাই কি বলেছেন কথাটি? আমি বলেছিলাম হ্যা তিনি বলেছেন। নাঈম ভাই বলেছিলেন দেখ পরে যেন কোনো ঝামেলা না হয়। আমি বলেছিলাম গাফফার ভাই তো বলেছেন আপনি ছেপে দেন । নাঈম ভাই দিয়েছিলেন ছেপে, তারপর গাফফার ভাই অস্বীকার করেছিলেন তিনি কথাটি ঐভাবে বলেননি। তিনি সাংবাদিক মরহুম মুসা সাহেবের এবিএমমুসা তাকে কথাটি বলেছিলেন, এভাবে তিনি প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলেন দৈনিক আমাদের সময়ে। আমার কাছে তার বক্তব্যের রেকর্ড থাকায় আমি সে যাত্রা বেচে গিয়েছিলাম। সেটি আরেক প্রসংঙ্গ।
এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে আত্মীয়দেরকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ঠেনে নিয়ে আসছেন তাতে কি ভবিষ্যতে ৭৫ এর ঘটনা ঘটে কি-না আল্লাহ জানেন। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বঙ্গবন্ধুর লাশ ধানমন্ডীর ৩২ নাম্বারে পড়েছিল কিন্তু আওয়ামীলীগের কোনো নেতা সেখানে যায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আসলে মার শুরু হলে সবাই দৌড় দেয়। ঐ যে কি একটা নাম ছিলনা দৌড় সালাউদ্দিন। দৌড় সালাউদ্দীনের উপরে ঔষধ নেই। ৭৫ এ তো অনেকেই দৌড়ে পালিয়েছে, দৌড় শুরু হলে কোনো কিছুই খোজে পাওয়া যায়না। ওয়ান ইলেভেনের পর বিএনপির দৌড় যখন শুরু হয়েছিল সেটির শেষ হয়েছে, এখন আওয়ামীলীগেরও কোনো একদিন হয়তো দৌড় শুরু হবে। তখন কে কোন দিকে দৌড়াবে তার হদিস পাওয়া যাবেনা। সে যাক, ফজলে নুর তাপস সাহেবকে আওয়ামীলীগ মনোয়ন দিয়েছে তিনি মনোয়ন লাভ করেছেন, সাধারণত যারা রানিং অথবা সিটিং মেয়র থাকে তাদেরকে পুনরায় মনোয়ন দেয়া হয়, যেটি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদের বেলায়ও ঘটেছে। সাঈদ খোকন সাহেব মনোয়ান পাননি, ডেঙ্গু যদি একমাত্র কারন হয়ে থাকে তাহলে তো আতিক সাহেবেরও মনোয়ন পাওয়ার কথা না। ডেঙ্গু তো শুধু মাত্র ঢাকার একটি এলাকার সমস্যা ছিল না। পুরো ঢাকা শহরের সমস্যা ছিল। আমি জানিনা তাপস সাহেব কতটুকু সৎ উপায়ে টাকা রোজগার করেছেন? আমরা তো দেখেছি লন্ডনে কে কি ছিলেন, কার কত টাকা ছিল, এখন তো নির্বাচনের হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন তার ২৬ কোটি টাকা আছে নগদ! এ টাকার উৎস কি? তিনি তো ব্যংকের ও ডিরেক্টর মধুমতি নামক ব্যংকের। তিনি মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রিচেষ্ট মেয়র প্রার্থী!
অনেকেই বলেন মরহুম শেখ মনির অবদান রয়েছে যার কারনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একই পরিবারের দুই সদস্যকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছেন। অবদান তো অনেকেরই আছে। মরহুম সামাদ আজাদ সাহেবের কি অবদান নেই? আজিজুস সমাদ ডনের কি কোনো যোগ্যতা নেই? সেদিন একজন আমার সাথে তাপস সাহেবের যোগ্যতা নিয়ে তর্ক করতে চেয়েছিলেন আমি পাত্তা দেইনি। কারন আমার তো নিকট আত্মীয় ব্যারিষ্টার, লন্ডনে রাস্তা ঘাটে এখন ব্যারিষ্টারের অভাব নেই। আজিজুস সামাদ ডন সাহেবের সাথে আমার অনেকবারই দেখা হয়েছে আমার অনুষ্টান ষ্ট্রেইট ডায়লগে তিনি অনেকবারই এসেছেন, কথা বলেছি, জিজ্ঞাস করেছি এমপি মন্ত্রী কবে হবেন, তিনি আমাকে দীর্ঘশ্বাস উপহার দিয়েছেন, তার কিছু অন্ধ সমর্থক রয়েছেন তারা বলেছেন নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করেন তাকেই তিনি পদ দেন। একজন তো আমাকে বলেছেন তাপস পরসের যোগ্যতা আছে এর জন্যই তারা পদ পেয়েছেন তা ছাড়া তাদের বাবার অবদান রয়েছে যুবলীগে, বলেছিলাম ফালতু কথা বলবেননা। তাপস পরশের যোগ্যতা থেকে সামাদ আজাদ পুত্র ডনের যোগ্যতা কোনো অংশেই কম নয়। কথা হচ্ছে আত্মীয়করন কেন হচ্ছে সেটা আওয়ামলীগের অনেক হাইকমান্ড যেভাবে জানেন আমিও সেভাবে জানি। প্রকাশ করা যাবেনা। তবে সময় আসলে আমার প্রকাশ করতে কোনো অুসবিধে নেই। কারন আমার লেখালেখি নিয়ে অনেকেই জিজ্ঞাস করেন দেশে যাওয়ার কি কোনো খেয়াল আছে? বলেছি না গেলে কি আমার বিয়ে, আমি তো আর বিয়ে করতে পারবোনা, বয়স চলে গেছে, আমার ছেলের বিয়ে কি আঠকাবে? আঠকাবেনা। আজিজুস সামাদ ডন থেকে অনেক লেস কোয়ালিটির লোক আওয়ামীলীগে এমপি আছে মন্ত্রী আছে। অনেকের শরীর থেকে তো দুর্ঘন্ধ ছড়ায়, ওসব বলে লাভ নেই। ব্যাক্তিগত পর্যায়ে যাওয়ার দরকার নেই। শুভ কামনা থাকলো ব্যারিষ্টার ফজলে নুর তাপস সাহেবের প্রতি, সমবেদনা রইলো সাঈদ খোকনের প্রতি, মনে রাখতে হবে মেয়র পদটিই পৃথিবীর শেষ প্রান্ত নয়। ইটস নট এ ইন্ড অফ ওয়ার্ল্ড, এভরি এন্ডিংস ব্রিংগস এ নিউ বিগেনিংস, সবাইকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা।
লেখক সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
লন্ডন ৫/১/২০২০