বৃটেনে রাজ পরিবারে হ্যারি ও মেগান সমস্যা, হাঙ্গার বেটী বিয়ে করলে যা হয়…
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১৫:৪১,অপরাহ্ন ১৬ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ১২১৬৬৮ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
২০১৮ সালের মে মাসে মেগান হ্যারির বিয়ে হয়েছিল লন্ডনের বাকশায়ারের উয়িন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপলে। গোটা পৃথিবীর সবাই আমার মত টেলিভিশনে ঐ রাজকীয় বিয়ে লাইভ দেখেছিল। আমি তৎকালীন সময়ে একটি লেখা ও লিখেছিলাম তাদেরকে নিয়ে, তাদের বিয়েতে শুভ কামনা জানিয়েছিলাম, জানাতে হয় নতুন বিয়ে করলে, কেউ নতুন ব্যবসা করলে, নতুন চাকরী পেলে, নতুন বাড়ী কিনলে, এক বাঞ্চ ফ্লাওয়ার ও একটি কার্ড দিতে হয়। শুভ কামনা জানিয়ে বলতে হয় আপনার বিয়ে সারা জীবন ঠিকে থাকুক। যদিও কবি বলে গেছেন বিয়ের পর ভালোবাসা তিন মাস থাকে, তার পর তো শুরু হয় ঝগড়া বিবাধ গালাগালি, প্রথমে বলা হয় জমিদার বিয়ে করেছি. এ ক্ষেত্রে মেয়েরা শশুর বাড়ীর গল্প একটু বেশী বলে। পরবর্তীতে বলে ফকিরনী বিয়ে করেছি।
সে যাক, মেগান হ্যারি দুই জগতের দুই বাসিন্দা। বিয়ের সময় আমার কেন জানি মনে হয়েছিল মেগানের সমস্যা হবে ডায়নার মত। কারন মেগান রাজপরিবারের নিয়ম কানুন মানতে পারবেননা। বিয়ের দুবছরও যায়নি হঠাৎ করেই তাদের রাজ-পরিবার থেকে পদত্যাগের ঘোষনা বেশ বে কায়দায় ফেলে দিয়েছে। অবশ্য রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ অনেক শক্ত মহিলা। পুরোপুরি বাঙালী শাশুড়ীদের মত। ভদ্র মহিলা এ বয়সেই এতটা কর্মঠ এবং ন্যায় নীতিপরায়ন যা কল্পনা করা যায়না। ছেলে প্রিন্স চার্লসের বিয়ের সময় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ খুবই বিরক্ত ছিলেন, ক্যামিলাকে তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামীকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে কিছুক্ষন পর চলে যান। কারন ক্যামিলার বয়স এবং মুখের যে সেইভ সেটি অনেকটা ঘোড়ার মত, বাংলায় যেটাকে বলে ঘোড়ামুখী মহিলা। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্বামীকে বলেছিলেন “লেটস গো টু সি রিয়েল হর্স রেইস“……।
আমি জানিনা শেষ পর্যন্ত কি হবে হ্যারি এবং মেগান কি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন? তারা এত বড় সিদ্ধান্ত পরিবারের সাথে কথা না বলে নিলেন কি করে? তবে মেগানের বিয়ে প্রথম থেকেই যদি রাজপরিবার মেনে না নিত তাহলে আজকে এ সমস্যা হতো না। কারন হ্যারির সাথে মেগানের কোনোভাবেই সম্পর্ক যায়না। আমি বুঝতে পারছি বিয়ের পর থেকেই মেগান হ্যারিকে চাপ দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন চলো আমরা রাজ-পরিবারের এই নিয়ম কানুন থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করি। বৃটিশ টেবলয়েড গুলো নাকি তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে! আমার কাছে সেটি মনে হয়না। নিউজ পেপারের কাজই তো নিউজ করা। এখন একজন যদি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে চলাফেরা করেন তাহলে তো পাপারাজিরা কি করবে সে তো ছবি তুলবেই। আমার যদি স্ক্যান্ডাল থাকে তাহলে পত্রিকাওয়ালারা কি বসে থাকবে?
বৃটিশ রাজপরিবারকে কিন্তু সাধারন মানুষ ভালোবাসে। সাধারন মানুষ মেগান অথবা হ্যারির কাছ থেকে এসব সিদ্ধান্ত আশা করেনা। সবচাইতে বেশী বেকায়দায় রয়েছেন হ্যারির বাবা প্রিন্স চার্লস। তিনি যদি ক্যামিলার সাথে প্রেমে না জড়াতেন এবং ডায়নাকে না ছাড়তেন তাহলে আজকে রাজপরিবারের এ সমস্যা হতো না। হ্যারি যাই করছেন আমার মনে হয় একে তো মেগানের উসকানি দ্বিতীয়ত মা ডায়নার অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন হ্যারিকে এ পথে পা বাড়াতে সাহায্য করেছে। তবে হ্যারি এবং মেগানের এই সব সমস্যা আমাকে স্বরন করিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে যখন আগেকার সময়ে বিয়ে শাদী হতো তখন কিন্তু মুরুব্বীরা একদম ভালোভাবে ছেলে মেযের সব কিছু জেনে শুনে বুঝে আত্মীয়তা করতো। আমার কাছে ছোট বেলায় যদিও ব্যাপারটি অনেকটা বাড়াবাড়ি মনে হতো কিন্তু সময়ের বিবর্তনে দেখলাম, বিয়ে শাদী করতে হলে অবশ্যই দেখে শুনে করা উচিৎ।
আমার এ লেখা পড়ে হয়তো অনেকেই আপসেট হতে পারেন, কষ্ট পেতে পারেন, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি কাউকে আঘাত বা কষ্ট দেয়ার জন্য বলছিনা। ব্যাপারটি খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে বুঝতে হবে। যে ডিজিটাল যুগ, এখন তো হ্যালো আর বলো। এভাবেই তো বিয়ে শাদী হচ্ছে। ফেইসবুকে দেখছে মেয়ের ফটো, ছেলে পাগল হয়ে গেল, কিছুদিন যেতে না যেতেই বিয়ে, তারপর দুএক বছর পার হবার পর দুজনার দুটি পথ দুদিকে গেছে চলে———।
এই যে বিয়ে শাদীর সমস্যা এগুলো খুবই সহজে অভারকাম করা যায়। মেয়ের ছেলেকে দেখা উচিৎ। অবিভাবকদের দেখা উচিৎ। মেয়ে এবং ছেলের মা কেমন ছিল? ব্রোকেন ফ্যমেলি কি-না? পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, মহিলা এবং পুরুষের আগে কয়টি বিয়ে হয়েছে, কয়টি বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড ছিল, এখন বিয়ে যদি ইতিমধ্যে ৩/৪ টা হয়ে যায় আর বয়ফ্রেন্ড যদি আরো থাকে তাহলে কি অবস্থা? অতএব সব কিছু দেখে শুনে তারপর আত্মীয়তা করা উচিৎ। এখন খোদায় না করুক আগামীকাল যদি আমার ছেলে ডিভোর্সী মহিলা একটা তার থেকে বয়সে বড় ধরে নিয়ে আসে আমি তো সেটা মানবোনা। একজন হাঙ্গার বেটা একজন হাঙ্গার বেটি বিয়ে করতে পারে। কিন্তু আমার ছেলে আপনার ছেলে সে কেন হাঙ্গার বেটি বিয়ে করবে? এ সব আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, নতুবা হ্যারি অথবা মেগানের মত বিয়ের দু বছর যেতে না যেতেই পরিবারের কাউকে না বলে চলে যাবে। তখন আপনাকে আমাকে সারা জীবন কাঁদতে হবে, আমরা হয়তো ব্যাক্তিগতভাবে কাঁদলাম, কিন্তু রাজপরিবার? মুখ দেখাতে পারছেনা। মেগান কি ছিলেন রাজপরিবারে আসার আগে? কিছুনা, এখন তিনি রয়েল হাইনেস! মেগানের বিয়ের দিন মেগানের মা ছিলেন কম্পিলটলী লস্ট।
আমরা ছেলে জন্ম দিলাম মেয়ে জন্ম দিলাম, সকালে স্কুলে দিলাম, খাবার খাওয়ালাম ভরন পোষন করলাম বড় করলাম, বিবাহিত মহিলা বিয়ে করার জন্য? বিবাহিত মহিলারা আরেকজন বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করুক। আমরা আশা করি মেগান এবং হ্যারির বিয়ে অনন্তকাল ঠিকবে। যেহেতু তারা বিয়ে করে ফেলেছেন এখন হাঙ্গার বেটী হউক আর না হউক সারা জীবন পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দেয়া উচিৎ। লাইফ ইজ ভেরী শর্ট কাল পড়ে মরে যাবেন। আমি জানিনা মেগান কি শেষ পর্যন্ত ডায়নার অবস্থানে পড়ে যান কি-না কে জানে!
১৯৯৭ ইংরেজীতে প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছিলেন অন্তসত্বা ডায়না এবং তার ভালোবাসার প্রিয় মানুষ ডোডি আল ফায়িদ। লন্ডনের বিখ্যাত হ্যরোডসের মালিক আল ফায়িদ ছিলেন ডোডির পিতা। আসলে প্রেম করো আর যাই করো বুঝে শুনে করা উচিৎ। আল ফায়িদ ও কম করেননি। এক সময় টাকা পয়সা কামাই করে তিনি বৃটিশ ষ্টাবলিষ্টমেন্টের সাথে বেশ কিছু বিষয়ে মনোবিবাদে জড়িয়ে যান। যার ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ ষ্টাবলিষ্টমেন্ট বলেছিল যে প্লেইট নিয়ে মিশর থেকে এসেছিলে সেখানে ফেরৎ পাঠিয়ে দিবে। আল ফায়িদ অরিজিনেলী মিশরের লোক ছিলেন। তিনি একরকম বাধ্য হয়েই তার ব্যবসা বিক্রি করে লন্ডন ত্যাগ করেছিলেন। লন্ডনে কোনো ব্যবসা যদি ভালো চলে অথবা রাজপরিবার যদি রিগকনাইজ করে তাহলে দেখবেন “হার ম্যাজিষ্ট্রির“ লগো থাকে। হ্যরোডসে “হার ম্যাজিষ্ট্রির“ লগো ছিল, ডায়নার সাথে ডডি আল ফায়িদের প্রেমের ঘটনা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় প্যারিসে মৃত্যুবরন করার পর সব উঠে গিয়েছিল। প্রিয় পাঠক মেগানের বিয়েতে আপনারা যারা লাইভ প্রোগ্রাম টিভিতে দেখেছিলেন জানিনা মনে আছে কি-না? মেগান আমেরিকান একজন বিশপস নিয়ে এসেছিলেন নাম ছিল মাইকেল ক্যারী। মাইকেল ক্যরির বক্তব্য ছিল ফাটাফাটি, তবে তিনি বক্তৃতা শুরু করেছিলেন ব্রাদারস এন্ড সিস্টার বলে, যেখানে রানী বসা একবারও তিনি বলেননি হারমেজিষ্ট্রি অথবা এক্সেলেন্সী। কিছু নিয়ম কানুন আছে প্রত্যেকটি সমাজকে মানতে হয়, আপনাকে বুঝতে হবে আপনি আপনার ভাইর সাথে কিভাবে কথা বলবেন, বাবা মা সাথে কিভাবে কথা বলবেন, এখন বাবাকে তো বলতে পারবেন না কি-রে-বেটা কেমন আছিস? শশুরকে কি বলতে পারবেন? পারবেন না। রেসপেক্ট রেখে কথা বলতে হবে। প্রত্যেকটি কালচারে শ্রদ্ধাবোধ ভালোবাসা বিদ্যমান। কিন্তু বিশপস ক্যারি কোনো শ্রদ্ধাবোধ দেখাননি।
শেষ কথাঃ হ্যারি মেগান যেটি করেছেন সেটি তারা আমার দৃষ্টিতে করতে পারেননা। বৃটিশ মনাকী অথবা বৃটিশ রাজপরিবার অনেক আধুনিক। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ অথবা বৃটিশ রাজপরিবার যতদিন আছে আমার মত ইমিগ্রেন্টরা অনেকটা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। বয়স্ক যারা তারা বলতে পারবেন ৭০ এর দশকে যখন বলা হয়েছিল কালো মানুষদের বৃটেনে থেকে বের করে দিতে তখন কিন্তু রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বলেছিলেন সেটি কি করে সম্ভব? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কালো মানুষরা বৃটেনের হয়ে যুদ্ধ করেছে এখনো টেমসে তাদের রক্ত পাওয়া যাবে। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকেই রাজতন্ত্র রাজা রানী উঠে গেছে কিন্তু বৃটেনে বহাল তবিয়তে আছে। মানুষ চায় বৃটিশ মনাকী বেঁচে থাক। সোমবারের মিটিংএ রানী বলেছেন তাদেরকে চলে যাওয়ার জন্য। কিছুই করার নেই। মেগান তাতে খুশী হয়েছেন। কারন একে তো তিনি ডিভোর্সী, দ্বিতীয়ত মেগানের পরিবারও ডিভোর্সী মেগানের মা বাবা এক সাথে নেই। এখন মেগান তো হ্যারিকে নিয়ে চলে যাবেন এটাই স্বাভাবিক এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
তারপরও বলতে হবে আমেরিকান বিশপস মাইকেল ক্যারির ভাষায় “লাভ ইজ পাওয়ার পাওয়ার ইজ লাভ“ অথবা হ্যারি এখন গান গাইতে পারেন “ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে মেগান তোমাকে করেছে রানী“।
লেখক সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব।
লন্ডন মঙ্গলবার ১৫/০১/২০২০ ইংরেজী