ওবায়দুল কাদের সাহেবের বংশে হয়তো ঘড়ি পরেননি, তিনি পরেছেন, তাতে সাংবাদিকদের জ্বলে কেন?
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৯:৫৮,অপরাহ্ন ২৩ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ১২৭৩৮৫ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
আমার ছোটবেলায় কোনো কিছু না পাওয়ার বেদনা এবং খুব মন খারাপ হলে রবীন্দ্র সংগীত শুনতাম। আমার এক বড় বোন আমাকে বলেছিলেন গান শুনবে কবিতা শুনবে, জিজ্ঞাস করেছিলাম এ সব শুনলে কি হবে? তিনি বলেছিলেন তুই অনেক বড় মনের মানুষ হতে পারবে। আর ঘুম না আসলেও রবীন্দ্র সংগীত শুনবে। আপার কথা শুনে আমি মাঝে মধ্যে রবীন্দ্রসংগীত শুনতাম, একটি সংগীত এখনো মনে আছে “আমি বহু বাসনায় প্রাণপনে চাই বঞ্চিত করে বাচালে মোরে————। কবিতা ভালো লাগতো, তবে কবি মানে তো প্রেম, এক সময় মনে হতো দুর এ সব গান, কবিতা শুনে আমার কোনো কিছুই হবেনা, আমি বাদ দিয়েছিলাম, সময় নষ্ট করার মত সময় কোথায়? জীবনের গল্প যে কত কঠিন এসব গান আর কবিতা কি সেটি বুঝবে? আমাদের এক বন্ধু কবিতা লিখতো, তো আরেক বন্ধু তাকে ঠাট্টা করে বলতো কি-রে কবি বন্ধু, “হারাইল্লার পাতা হারাইল্লার পাতা তোমি আমায় দিওনা ব্যাথা তোমি আমার দিলে ব্যথা তোমার——দিমু যাতা——-। কবি বন্ধু রাগ করে ওকে বলতো অশিক্ষিতরা এভাবেই কবিতার সমালোচনা করে। আমি শুনতাম কিন্তু কোনো মন্তব্য করতামনা। ও বলতো কবি মানে তিনি ব্যর্থ প্রেমিক, সারাক্ষন গাছ লতা পাতা খাল বিল নদী নালা নিয়ে ব্যস্ত। পরবর্তীতে শুনেছিলাম আমার ঐ বড় বোনটি ব্যর্থ প্রেমিক ছিলেন, এর জন্য তিনি গান কবিতা শুনতেন, অন্যকে ও শুনার পরামর্শ দিতেন। আমি তো দেখেছি এ সমাজের শিল্পি সাহিত্যিক কবিরা কত বড় মনের! কত বড় মাপের? সেদিন ওবায়দুল কাদের সাহেবের ঘড়ি বিলাসিতার খবর শুনে আমার মনটি খুবই খারাপ হয়েছিল। মন খারাপ হওয়ার পর আমি গান শুনার চেষ্টা করেছি কবিতা শুনতে চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই মন থেকে এসব সরাতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম উবায়দুল কাদের সাহেব হয়তো বা সৎ মানুষ এ তো দেখছি মহা দুর্নীতিবাজ। মহাচোর!!!
সে যাক আমার একটা ঘড়ি আছে, একটা না কয়েকটা আছে, তবে কাদের সাহেবের ঘড়ির মত খুব বেশী দামী না। কিন্তু দেখতে মনে হয় অনেক দামী। কয়েকটির মধ্যে একটি ঘড়ির ডায়েল অনেক বড়। তো একবার টেলিভিশনে টক শোতে বসেছি, লাইভ প্রোগ্রামে, একজন দর্শক ফোন করে বলেছিলেন ভাই আপনার ঘড়ি পড়ার ষ্টাইলে মনে হয় এ জীবনে আপনি ঘড়ি পড়েননি। বলেছিলাম (বাপর ঘুতে ঘড়ি না পড়লে যা হয়) (সিলেটি ভাষা) মানে হচ্ছে বাবার জন্মে ঘড়ি না পড়লে যা হয়। তো দর্শক আমার উত্তর শুনে একেবারে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন না ভাই আমি ওটা মিন করিনি। আমি বলেছিলাম ধন্যবাদ। ৬/৭ মাস আগে লন্ডনে পররাষ্টমন্ত্রী মোমেন সাহেবের সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে ঘড়িটি মন্ত্রী মহোদয়ের চোখে পড়ে, জিজ্ঞাস করেছিলেন কোথা থেকে কিনেছেন, বলেছিলাম আপনার সাবেক কর্মস্থল আমেরিকা থেকে। তিনি অবাক হয়ে বলেছিলেন এ ঘড়ি দিয়ে কাউকে আঘাত করলে তো মরে যাবে। ঘড়ির প্রতি অনেকেরই দুর্বলতা আছে, আমারও আছে, থাকতেই পারে , থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সেটি যদি নিজের বাবার টাকায় হয়, সেটি যদি নিজের রক্তে ঘামে পরিশ্রমের টাকায় কিনা হয় তাহলে তো কেউ প্রশ্ন তুলবেনা। একবার শুনেছিলাম ফিলিপিনসের রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর ১৭০ জোড়া জুতার গল্প। খোজ নিয়ে জানা গিয়েছিল ঐ মহিলা নাকি খুবই গরীব ছিলেন তাদের জুতা পড়া দুরে থাক দুবেলা খাওয়াও ভাগ্যে জুটতোনা, বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করে তাদের বেশীর-ভাগেরই পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা স্বচ্চল নয়। সারা জীবন কষ্ট করেছে এখন এমপি. মন্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছে দুর্নীতি করে কিছু টাকা পয়সা এসেছে হাতে, একটু বিলাসিতা তো করতে হবে। সাংবাদিকদের তাতে সমস্যা কি? এই সংবাদিকরা ওবায়দুল কাদের সাহেব কোথায় একটি ঘড়ি পড়েছেন সেটি নিয়েও কথা বলে। লন্ডনে বেশ আগে স্মৃতি যদি আমার সাথে প্রতারনা না করে তাহেল ২০০০ সালের প্রথম দিকে টনি ব্লেয়ার তখন প্রধানমন্ত্রী , টনির স্ত্রী সেরি ব্লেয়ার বিনা টিকেটে লন্ডনের ব্লাকফেয়ারস ষ্টেশন থেকে লুটনে চলে গিয়েছিলেন, টিকেট চেকার টিটি তাকে ধরে ১০ পাউন্ড জরিমানা করেছিলেন, সেরি ব্লেয়ার বলেছিলেন আমি সেরি ব্লেয়ার, তিনি বাংলাদেশী ষ্টাইলে ক্ষমতার দাপট দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কাজ হয়নি, টিকেট চেকার ছিলেন নির্বীকার। তার ভাবখানা ছিল তোমি সেরি ব্লেয়ার হও, আর যাই হও, আমার কাজ আমি করেছি। পারলে কিছু করো। বিষয়টি মুহুর্তেই রাষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সাংবাদিকরা ব্যপারটি নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে দিলেন। কেউ কেউ এমনও বলেছিলেন শেরী ব্লেয়ার কি করে বিনা টিকেটে ভ্রমন করেন। তিনি তো রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ নীতি নির্ধারকের স্ত্রী। তা ছাড়া তৎকালীন সময়ে তিনি বিচারপতিও ছিলেন, আর তো তিনি ব্যারিষ্টার, কিউসি। টনি ব্লেয়ার উপায়ন্তর না দেখে শর্তহীন ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। টনি ব্লেয়ার প্লেইন ইংরেজীতে বলেছিলেন সরি। সরি বলার পর গল্পের সমাপ্তি ঘটেছিল।
বৃটেনে সলিসিটর, ডাক্তার ব্যারিষ্টার রাজনীতিবীদরা কোনোভাবেই কোনো দুনাম্বারী কাজ করতে পারবেননা। এর জন্য তো মা মাটির টানে অনেক ব্যারিষ্টার বাংলাদেশে গিয়ে দুনাম্বারী কাজ করেন, শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান, সরকার পরবির্তন হলে জেলেও যান, আবার বের হয়ে তিনি ঠিকই বহাল তবিয়তে ব্যারিষ্টারী চালিয়ে যান। একজন ব্যারিষ্টার দুর্নীতির দায়ে জেলে গেলে সে কোনোভাবেই তার ব্যারিষ্টারী সার্টিফিকেট ধরে রাখতে পারবেনা। কিন্তু সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে সব কিছুই পারা যায়।
ওবায়দুল কাদের সাহেবের ঘড়ি বিলাসিতার ব্যাপারে টিআইবি বলেছে মন্ত্রীর উপহার ঘড়িতে সীমাবদ্ধ কি-না? বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। টিআইবি বলার আগে তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ ছিল কাদের সাহেবকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাস করা এবং গাড় ধরে মন্ত্রী সভা এবং আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটি করেননি। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করেছি উল্টো কাদের সাহেব নিজেকে ডিপেন্ড করেছেন। তিনি বলেছেন তার নাকি পরিচিত বন্ধুবান্ধবরা বিদেশে গেলে এসব লক্ষ লক্ষ টাকা দামের ঘড়ি তার জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন। মানুষের কি এমন ঠেকা তার জন্য উপহার নিয়ে আসবে বিদেশ থেকে? এ ছাড়া কাদের সাহেব বলেছেন তার নির্বাচনের সময় নাকি তার অফিসের সহকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেনীর কন্ট্রাক্টর তাকে অর্থনৈতকভাবে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি তা গ্রহন করেননি। তিনি এটা বলে নিজেকে সৎ প্রমান করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার বিরুদ্ধে শুদ্বি অভিযান চালান? আমি তো দেখছি এই ওবায়দুল কাদের সাহেব বড় দুর্নীতিবাজ। একটা অসৎ মানুষ দলের সাধারন সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে অসীন থাকে কি করে? মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও ওরা দুর্নীতি করে? আল্লাহ সহ্য করেন কিভাবে? আল্লাহ অবশ্য সহ্য করেন কারন তিনি তো রহমানুর রহিম, তিনি অতিশয় দয়ালু, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তো অতিশয় দয়ালু, এবং ক্ষমাশীল। তিনি মমতাময়ী ও দুর্নীতিপরায়নদের আশ্রয় এবং প্রশ্রয়দাতা।
বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রীর উদাহারণ এখানে কেন নিয়ে এসেছি পাঠকরা হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন। টনি ব্লেয়ার সাহেব যখন দেখেছিলেন তার স্ত্রী সেরী ব্লেয়ার ভ’ল করেছেন অন্যায় করেছেন তিনি শর্তহীনভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন জাতীর কাছে। কিন্তু বাংলাদেশে ওবায়ুদল কাদের সাহেব ক্ষমা চাওয়া দুরে থাক উল্টো নিজের দুর্নীতিকে ডিপেন্ড করেছেন। আসলে এ না হলে ওবায়দুল কাদের হওয়া যায়না। ওবায়দুল কাদের হতে হলে দুর্নীতি করতে হবে? ওবায়দুল কাদের হতে হলে দুর্নীতিকে ডিপেন্ড করা শিখতে হবে। কাদের সাহেবের সাহসের ধন্যবাদ দিতে হয় কারন যে অনলাইন পত্রিকাটি নিউজ করেছিল সেটি নাকি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমি সেই অনলাইন পত্রিকাটিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। শুনেছি বিদেশে বসে নাকি সেটি তারা চালান। আসলে দেশের বাইরে যে সব লেখক সাংবাদিকরা রয়েছেন তাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। এ সরকার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো দুর্নীতি করেননা , কিন্তু তিনি দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলেন, এবং যখন তিনি নামাতে চান তখন বড্ড বেশী দেরী হয়ে যায়। শুনেছি ক্যাসিনো হোতারা নাকি এখন ঢাকায় ফিরে এসেছে ওরা নাকি এখন কাউন্সিলর পদে মনোয়নও পেয়েছে, নির্বাচনও করবে। তাহলে ইয়াবা বদির দোষ কি? মাননীয় ওবায়দুল কাদের সাহেব ইয়াবা বদিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। তাহলে তো ষোল কলা পূর্ণ হয়ে যাবে।
শেষ কথাঃ হায়রে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তোমার জন্য আমার বড় দুঃখ হয় তোমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের মত একটা অসৎ ঘড়ি দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তির দ্বারা পরিচালিত। কয়েকদিন আগে যুবলীগ পরিচালিত হতো ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দ্বারা। তারপর কি? আছো কোনো দেশ প্রেমিক সাংবাদিক বের করে ফেল না পারলে আমাকে বলো, আমাকে ইনফরমেশন দাও, আমি প্রকাশ করে দিব। ওদের দুনীর্তি মুখোশ উম্মোচন করতে হবে। নতুবা দেশ ধ্বংশ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে যে সব সাংবাদিক রয়েছে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেনা। কারন তারা ৯০ পার্সেন্ট আওয়ামী সাংবাদিক তারা নিজেরাই অসৎ, তারা নিজেরাই একেকটা ওবায়দুল কাদের। আমি এসব অসৎ সাংবাদিকদের নামে চিনি। লিখবো তাদের কথাও ।
লেখক সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
লন্ডন ২২/০১/২০২০, বুধবার