ঢাকা সিটি নির্বাচনঃ বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ভাই, সোমা ইসলামের টক শোতে আওয়ামী প্রার্থীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ায় কষ্ট পেলাম!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৫:১৩,অপরাহ্ন ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ১২৭১৮৯ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
ঠান্ডার কারনে অনেকদিন টেমসের পাড় দিয়ে হাটা হয়না। আজ সেন্ট্রাল লন্ডনে গিয়েছিলাম, আসার সময় পূর্ব লন্ডনের ক্যনারীওয়ার্ফে এসে ট্রেন থেকে নেমে টেমস পাথ দিয়ে হেটে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ মোবাইলে মেসেঞ্জারে আওয়াজ পেলাম, অনেকক্ষন হাটার পর একটু ক্লান্তি অনুভব করছিলাম। টেমসের পারে একটি বেঞ্চে বসে পড়লাম। বসে বসে নদী দেখছি। নদীর অন্যপারে হিলটন হোটেলের নাম দেখা-যাচ্ছিল, সিটিক্রুজগুলো যাত্রী নিয়ে ক্যনারীওয়ার্ফ থেকে ওয়েস্টমিনিস্টারের দিকে যাচ্ছে, সিটিক্রুজ যাওয়ার কারনে এবং বাতাসের জন্য নদীর ঢেউ উঠছে তো উঠছেই। দুর থেকে ঢেউগুলি কোনো শব্দ না করলেও কিনারে আসার পর একটি মৃদু গর্জন করে কিছুটা ফেনা তুলে। আমি অপলক দৃষ্টি নিয়ে ফেনার দিকে থাকাই। নদীর পানি এবং ফেনা মিলে অদ্ভুত এক সৌন্দয্য আমি উপভোগ করেছিলাম। এই টেমসকে ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি, যৌবনের সেই উত্তাল দিনগুলো আজো আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। কত কিছু করেছি। বাংলা সিনেমায় নায়ক নায়িকা যেভাবে চন্দ্র সুর্য সাক্ষী রেখে বিয়ে করে, আমিও টেমসকে সাক্ষী রেখে কতজনকে যে ভালোবাসলাম তার কোনো হিসেব নেই। সময়ের বিবর্তনে আজ মনে হয় যা করেছি সবই তো ভুল করেছি, পাপ করেছি, এখন উঠতে বসতে আল্লাহ কে বলি হে আল্লাহ তোমি আমাকে ক্ষমা করো। অবশ্য সব দোষ যে আমার তাই বা বলি কি করে? প্রেম তো আর এক তরফা হয়না। মেয়েরাও আমার সাথে অনেক করেছে, আমার মা তো এখনো বলেন মেয়েদের কারনে আমার ছেলেটা অনেক কিছুই করতে পারেনি। আমার মা মনে করেন তার ছেলে ধুয়া তুলসি পাতা। এসব স্মৃতি মনে করে অনেক সময় পার করে দিলাম। হঠাৎ মনে হলো মেসেঞ্জার চেক করা হয়নি। চেক করলাম দেখলাম আমার এক বন্ধু সোমা ইসলামের টক শো মেট্রসম টু দ্যা পয়েণ্ট এর একটি ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছেন। ক্লিপটি এর আগেও দেখেছিলাম, কিন্তু সিরিয়াসলী দেখিনি। এবার ক্লিক করলাম আগ্রহভরে অনেক্ষন দেখলাম। আমার অত্যন্ত প্রিয় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধরী মানিক ভাই এবং বিএনপির নিলোফা চৌধুরী ম্যডাম ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে সোমার টক শোতে ঝগড়া করছেন।
সিটি নির্বাচন নিয়ে এর আগে বাংলা স্টেটমেন্টে দুটি লেখা লিখেছিলাম, সেখানে নির্বাচন কমিশন এবং দুদককে বলেছিলাম নির্বাচন বন্ধ করে তাপস সাহেব তাবিথ সাহেব এবং আতিক সাহেবদের ব্যংক একাউন্ট, ব্যবসা, সব কিছু খতিয়ে দেখতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। দেশটিতো একটি মগের মুল্লুক, আমাকে আমার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবাই বলেন কেন এসব লিখছো? কি লাভ এসব লিখে? গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দাও। চ্যানেল আই এর মত টেলিভিশন তোমার কাছে ছিল, এমন কোনো মন্ত্রী এমপি ছিলনা যাকে তুমি ইন্টারভিউ করনি, খাতির যেহেতু ছিল সেহেতু দেশে গিয়ে আর কোনো কিছু না পারো অন্তত ১০০/২০০ কোটি টাকা ব্যংক থেকে লোন নিয়ে মেরে দিলেই তো কাজ হতো, বাকী জীবন বসে বসে খেতে পারতা! দেখনা খবর বেরিয়েছে ব্যাংক থেকে পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা লোন নিয়েছেন শুধু ব্যাংক পরিচালকরা। আমি আমার বন্ধু বান্ধবদের কথা শুনি কিন্তু কোনো মন্তব্য করিনা। কারন এ পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে সৎভাবে চলতে চায়, সৎভাবে চলতে যেয়ে তার সব কিছু হারিয়ে সে নিঃস্ব হয়ে যায় তারপরও সে সততা ধরে রাখার চেষ্টা করে! এই লন্ডনে অথবা বাংলাদেশে অনেকেই তো আমাকে দুনাম্বারী কাজ কারবারের অফার দিয়েছে, কিন্তু আমি সেটি গ্রহন করিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি তো চিরস্থায়ী না। দুর্নিতির অপর পৃষ্টায় যে এ জগত সংসারে কিছু মানুষ নিজেকে সততার সাথে ধরে রাখে সেটি কজনকে বুঝাবেন?
সে যাক আজকের পরেই কাল নির্বাচন। মানিক ভাই এবং সোমাকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি। নীলুফা ম্যডামের সাথে আমার ব্যাক্তিগত পরিচয় না থাকলেও টক শোর মাধ্যমে নামের সাথে পরিচিত। সোমার উপস্থাপনায় টক শোটির কিছু অংশ দেখলাম। লন্ডনে ছিলেন মানিক ভাই, আমার শ্রদ্ধার মানুষ। অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক। লন্ডনে মানিক ভাই আসলে ফোন তিনি একটা করবেনই, কুশলাদি জিজ্ঞাস করবেন, মানিক ভাইর এই আন্তরিকতাকে আমি শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। মানিক ভাই সেদিন যেভাবে আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থীর পক্ষে সাফাই গাইলেন আমি মানিক ভাইর কথাগুলো বার বার শুনেছি, তিনি বলেছেন তাফস অনেক জনপ্রিয়, অনেক নাম করা লয়ার, প্রতিষ্টিত লয়ার ইত্যাদি। বিপরীতে তিনি বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থীকেই তিনি বলেছেন নির্বাচন করার অযোগ্য। তাপস সাহেব এবং আতিক সাহেব দুজনই ধুয়া তুলসীপাতা। প্রিয় মানিক ভাই- তাবিথ আউয়াল, তাপস, আতিক নির্বাচন করে কিভাবে? এরকম একটি লেখা আমি বাংলা স্টেটমেন্টে গত ১০ই জানয়ারীতে লিখেছিলাম। নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিলাম তাদের সব কিছু ভালোভাবে যাচাই-বাচাই করার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা। প্রিয় মানিক ভাই আমার খুবই জানতে ইচ্ছে করে তাপস সাহেব যখন লন্ডনে ছিলেন তখন কি আপনার সাথে তাপস সাহেবের দেখা হয়েছিল? আপনি কি জানেন তাপস সাহেব মধুমতি নামক একটি ব্যংকের ডিরেক্টর? বাকী আর বলতে চাইনা……। আপনি বলেছেন আতিক সাহেব খুবই নামকরা পরিবারের লোক, সংগীত প্রিয় মানুষ, গান করেন, চা তৈরী করেন, উত্তরে মনি বলেছেন তিনি একজন জৌকার, মনি সেটা বলতে পারেন কি-না আমি জানিনা, গান গাইতে পারেন, আপনি বলেছেন আপনিও গান করেন। সেটি আমরা জানি বড় ভাই, আপনার গান শুনে অনেক—– তো এই লন্ডনে পাগল, মানিক ভাই প্রেমের গান খুবই ভালো জানেন প্রিয় পাঠক—- সেটি নাইবা লিখলাম। মানিক ভাইর কথামত আতিক সাহেবের সব কিছু মেনে নিলাম, কিন্তু উনার তো ৫০০ কোটি টাকার উপরে ব্যংক লোন উনার নিজস্ব কোনো গাড়ী নেই, এটার ব্যপারে কি বলবেন মানিক ভাই? তাবিথ সাহেবের বিরুদ্ধে পানামা কেলেংকারীর যে অভিযোগ আপনি করেছেন সেখানে নিলুফা চৌধুরী মনি তো আওয়ামীলীগের অনেক মন্ত্রীর সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন। আপনি বলেছেন এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। মানিক ভাই আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি এ শ্রদ্ধার জায়গা থেকে দাড়িয়ে বলতে চাই তাবিথ, তাপস আতিক সাহেব উনারা কি নির্বাচন করার যোগ্যতা রাখেন? আপনি তাদের নির্বাচনী হলফনামায় গিয়ে দেখুন তাদের ব্যবসা বানিজ্যের কথা। একটার সাথে আরেকটার কোনো মিল নেই।
প্রিয় মানিক ভাই তারপরও উনারা নির্বাচন করছেন আগামীকাল নির্বাচন হবে। নির্বাচনে হয়তো দুজনই পাশ করবে। তবে শুনেছি সত্য মিথ্যা জানিনা ভাগাভাগি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। একটা আওয়ামীলীগ একটা বিএনপি এ রকম নাকি হতে পারে। একটি সুত্র থেকে বলা হচ্ছে আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন দুটোই তাদের দখলে নিয়ে নিতে। আবার কিছু নেতা বলছেন উত্তর দক্ষিন দুটিই বিএনপিকে দিয়ে দিলে কি হবে? জাতীয় সরকার তো আওয়ামীলীগের। যাই হোক না কেন পহেলা ফেব্রুয়ারীর রাতেই ফলাফল পেয়ে যাবে বাংলাদেশের মানুষ। আমার নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। কেন জানেন মানিক ভাই আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচনের সিষ্টেমটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমি এর আগে একটি লেখায় লিখেছিলাম বিএনপি এক মাগুরা মার্কা নির্বাচন করায় আমরা কত-না সমালোচনা করেছিলাম, এখন ৩০০ সিটেই মাগুরা মার্কা নির্বাচন হয় কিন্তু কেউ কিছু বলেনা। সবাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেই যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য ক্ষমতার মোহে এখন অনেকটা অন্ধ হয়ে গেছেন।
মানিক ভাই লিখা লম্বা করতে চাইনা। সম্পর্ক আপনার সাথে নষ্ট করতে চাইনা। আমার বন্ধু বান্ধবদের সংখ্যা এমনিতেই কম। আমার লেখাকে কোনোভাবেই দৃষ্টতা নিবেননা। আমি চাই নির্বাচনী সিষ্টেমে দেশে নির্বাচন হউক। ক্ষমতায় থাকার জন্য ফালতু কথা বলে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারেনা বলা উচিৎ না। ২০০৮ এ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামীলীগ নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিল। তারপরের ইতিহাস আপনি ও জানেন আমিও জানি। লিখে কোনো লাভ নেই। ২০১৪ সালে নির্বাচন হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সংবিধান রক্ষার নির্বাচন কিন্তু ৫ বছর কাটিয়ে দিলেন গায়ের জোরে। ২০১৯ এ আবার নির্বাচন হলো। আবার গায়ের জোর দেখানো হলো। গায়ে তো জোর বেশীদিন থাকেনা। এক সময় শক্তি কমে যায়। বৃদ্ধ হয়। মৃত্যুর দিকে এগুতে থাকে সবাই। আওয়ামীলীগ সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবেনা, তখন কি হবে? আমি সেটাই ভাবছি। আমি অবাক হয়ে ভাবি পৃথিবীর সব দেশেই সিষ্টেম গড়ে আর বাংলাদেশে সিষ্টেম ধ্বংস হয়। অথচ কোনোই দরকার নেই। ইভিএম কি মানিক ভাই বৃটেনে ব্যবহৃত হয়? হয়না। তাহলে এই ইভিএম কেন? বাংলাদেশ নাকি ডিজিটেলাইজেশন হচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে কিসের ডিজিটেলাইজেশন? সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই ”বাংলাদেশ পোভার্টি এসেসমেন্ট” নামে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে বাংলাদেশে এখনো প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন মানুষ গরীব। তারা বলছে ২০১০ সাল থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও দারিদ্র বিমোচনের গতি কমেছে। গত ৯ জানুয়ারী ইউকে ভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্টান ইকনমিস্ট ইনটেলিজেন্স বলছে গনতান্ত্রিক দেশের এমনকি ক্রটিপূর্ণ গনতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। অবশ্য ওরা বলবে কেন আমরা তো দেখছি কি হচ্ছে বাংলাদেশে। নির্বাচন আছে সিষ্টেম নেই। পুলিশও এখন বলে বিএনপির ইশরাকের পার্টি ঐ দিকে চলে গেছে আমাদের পার্টি (আওয়ামীলীগ) ঐখানে অবস্থান করছে। পুলিশের এই সত্য কথাটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে সহজ সরল স্বীকারোক্তি। এ ব্যপারে নির্বাচন কমিশন অবশ্য ফাজলামী কথা বলেছেন উনি অবশ্য ফাজলামী কথা বলবেনই, কারন তাকে রাখা হয়েছে ফাজলামী কথা বলার জন্য। অনেক কিছু লিখলাম মানিক ভাই। আপনি অনেক ভালো থাকবেন। লন্ডনে আসলে ফোন দিবেন প্লিজ। কথা দিচ্ছি আপনার অওয়ামীলীগ তাপস সাহেব আতিক সাহেব নিয়ে কোনো কিছু বলবোনা জিজ্ঞাসও করবোনা, আপনার জন্য, সোমা ইসলাম এবং নিলুফা চৌধুরী মনির জন্য আমার নিরন্তর শুভ কামনা।
লেখক : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক: চ্যানেল আই ইউরোপ
সাবেক সভাপতি: ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
৩১/০১/২০২০ ইংরেজী শুক্রবার