করোনাকালে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সুন্দরবন, বেড়েছে মধু উৎপাদনও
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:০৮:৪৭,অপরাহ্ন ১১ আগস্ট ২০২০ | সংবাদটি ৭১২ বার পঠিত
মনিরুল ইসলাম দুলু, সুন্দরবন থেকে ফিরে: করোনাকালিন সময়ে সুন্দরবন তার রুপকে আরও অপরুপ করার সুযোগ পেয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে সুন্দরবনে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় অনেকটাই কোলাহল মুক্ত আছে সুন্দরবন। বাড়ছে সুন্দরবনের গাছপালা। সেই সাথে বেড়েছে বণ্যপ্রাণীদের কোলাহল। সুন্দরবনের আকাশে ডানা মেলে উড়ছে নানা প্রজাতির পাখি। জনমানব শূন্য সুন্দরবন এখন নতুন অবয়ব ধারণ করেছে। সেই সাথে বেড়েছে মৌমাছির আবাসস্থল। বেড়েছে মধু এবং মোমের উৎপাদন ও আহরণ। সুন্দরবনে মধু ও মোমের উৎপাদন বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বন গবেষক, সুন্দরবনজীবী, মৌয়াল ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ শুরু হয় ১ এপ্রিল থেকে এবং তা শেষে হয় ১৫ জুন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে এক হাজার ২২০ কুইন্টাল মধু আহরণ করেছেন মৌয়ালরা। যা ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মধুর উৎপাদন ছিল ৭৪২ কুইন্টাল। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে গেল বছরের থেকে ৪৭৮ কুইন্টাল মধু বেশি উৎপাদিত হয়েছে। এরআগে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪৮৮ কুইন্টাল মধু উৎপাদন হয়েছিল।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্বের পরিমাণও বেড়েছে অনেক। এই অর্থবছরে মধু থেকে রাজস্ব এসেছে নয় লাখ ১৫ হাজার ৩৭৫ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজস্ব ছিল ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮০ টাকা মাত্র।
এদিকে, মধুর উৎপাদনের সঙ্গে মোমেরও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এ বছর। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ৩৬৬ কুইন্টাল মোম উৎপাদন হয়েছে। এই থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৫০ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোমের উৎপাদন ছিল ২২৯ কুইন্টাল এবং রাজস্ব ছিল দুই লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২০১৭-১৮ বছরে মোমের উৎপাদন ছিল মাত্র ১৫৮ কুইন্টাল এবং রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৩ টাকা।
বনবিভাগের জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে সবকিছুতেই একটা নতুনের ছোঁয়া লেগেছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের। নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এ বন। গত কয়েক মাসে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার না থাকায় বণ্যপ্রাণীরা যেমন নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারছে তেমনি মৌমাছির আবাসস্থল বেড়েছে কয়েকগুণ। বেড়েছে মধুর উৎপাদন। এতে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মৌয়ালরাও দারুণ খুশি।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগিয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও, বাগেরহাট) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনে গাছের ঘনন্ত বেড়েছে। মৌমাছিড়া তাদের নতুন বাসা করার জায়গা খুঁজে পেয়েছে। যত বেশি মৌচাক হয়েছে তত বেশি মধুও পাওয়া গিয়েছে। করোনাকালিন সময়ের জন্য বর্তমানে সুন্দরবনে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় কোলাহল মুক্ত ছিল সুন্দরবন। এছাড়াও স্মাট পেট্রোলিং এর কারণে সুন্দরবনে কোন লোক প্রবেশ করতে পরেছেনা। সব মিলিয়ে সুন্দরবনে মধু ও মোম আহরণ বেশি হয়েছে।
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন এর চেযারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, সুন্দবনের প্রাণীকুলে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সঠিক পরিবেশ পাওয়ার কারণে মৌমাছিরা মধু আহরণ করে চাকে রাখতে পারার কারণে মৌয়ালরা মধু ও মোম বেশি পেয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে তাদের আবাসস্থল নিরাপদ থাকে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।