নহ মাতা,নহ কন্যা নহ বধু সুন্দরী রুপসী…..”
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৩:৪৫,অপরাহ্ন ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ১১১৯ বার পঠিত
নাজনীন খান
দু’দিন থেকে দেখছি কন্যা দিবস পালন করছেন সবাই! আমি সত্যি বলতে এর পক্ষপাতী না। কন্যা দিবস আবার কি ! কন্যা এবং পুত্র উভয়ই আমাদের সন্তান, পরম ভালোবাসার, ধন। সন্তান দিবস হলে ঠিক আছে। আমি বুঝি না আলাদাভাবে কন্যা দিবস পালনের মাহাত্ম্য কি। ভাই-বোন দিবস হলেও মানা যায় কিন্তু কন্যা দিবস মেনে নেয়া যায় না। অন্তত আমি মানি না।
“নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’লারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন,যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।( সুরা আশ,শূরা আয়াত -৪৯)”
সন্তান মহান আল্লাহর দান। আল্লাহ কাউকে পুত্র,
কাউকে কন্যা, কাউকে পুত্র-কন্যা উভয়ই দেন আবার কাউকে নিঃসন্তান রাখেন। সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছা। পুত্র-কন্যা উভয়ই আমাদের সন্তান। উভয়ের জন্মের সময় একজন মা একই রকম কষ্ট সয়ে থাকেন। অনেকেই একটা সন্তানের জন্য আজীবন হাহাকার করেন। আবার কেউ কন্যা সন্তান হলে মন খারাপ করেন,অনেকে পুত্র সন্তান হলে নারাজ হন। আমাদের সন্তান কন্যা কিংবা পুত্র যাই হোক না কেন একটা সুস্থ সন্তানের জন্ম হওয়ার পর মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা আবশ্যক। আর সন্তানকে ছোট বেলা থেকেই সামাজিক,ধর্মীয় অনুশাসন, বিধিনিষেধ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়া একান্ত প্রয়োজন।
আমরা দেখি যত বিধিনিষেধ সব ছোট বেলা থেকে কন্যা সন্তানকেই দেয়া হয়ে থাকে। বিশেষ করে আগে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কন্যা সন্তান কে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হতো। যা এখন অনেকটা পালটে গেছে। কারণ এখন কন্যা সন্তানরা প্রমাণ করেছে সুন্দর পরিবেশ, সঠিক তত্ত্বাবধান, উৎসাহ, আর সাহস পেলে তারা যেকোনো ক্ষেত্রে কাজ করতে পারদর্শী। আমাদের সমাজে অনেক কন্যাসন্তান বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে নিজের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে। আমরা ছোট বেলা থেকেই যদি ছেলে -মেয়ে উভয়কেই সমান প্রাধান্য দিয়ে লালন করি তবে ছেলে-মেয়ের মধ্যে বৈষম্যের বিষয়টা একেবারে উপড়ে ফেলা যাবে। কিন্তু আমরা সেটা এখনো সবক্ষেত্রে করতে ব্যার্থ হয়েছি, পারি নাই।
আমাদের সময়ে, দাদি-নানীরা সবসময় কন্যা সন্তানদের ক্ষেত্রে যতো বিধিনিষেধ আরোপ করতেন আর পুত্র সন্তানের বেলায় উদারতা দেখাতেন। কারণ তখন উনারা এমন মানষিকতা,সামাজিকতার মধ্যে বেড়ে উঠেছেন তাই তাদের কাজ-কর্মে সেটার প্রতিফলন ঘটতো। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে একজন নারী দক্ষ হাতে সংসার এবং দপ্তর চালানোর চিত্র এখন সাধারণ বিষয়। যেদেশে দীর্ঘ সময় যাবৎ প্রধানমন্ত্রী একজন নারী যিনি দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করছেন সে দেশে “কন্যা দিবস ” আমরা কেন পালন করবো! আমাদের সন্তান আমাদের কন্যারা নিজের পছন্দের ক্ষেত্রটিতে যাতে বিচরণ করতে পারে এই আশ্বস্ততাটুকু আমরা তাদের দিই,তারা বাকিটা ঠিকই সামলে নেবে। আমাদের সমাজে যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে তার মূল কারণ পারিবারিক শিক্ষা, মূল্যবোধ, সু-শাসন এর অভাব। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সুন্দর পারিবারিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওটা কোন ছেলে কখনোই মেয়েদের অসম্মান,অমর্যাদা করতে পারে না। ধর্ষণ, শ্লিলতাহানীত দূরের কথা। তাই আমরা আমাদে সন্তানদের (কন্যা-পুত্র) ছোট বেলা থেকে সমান গুরুত্ব দিয়ে গড়ে, তুলবো। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার বন্ধন তৈরীতে সহায়তা করবো। তবেই তারা বুঝবে পুত্র-কন্যা একে অপরের পরিপুরক। যেমন যাদের কন্যা-পুত্র উভয় সন্তান রয়েছে তারা যদি ছেলে বাইরে থেকে আসলে বোনকে চা-নাস্তা দেয়ার কথা বলেন ঠিক একইভাবে মেয়ে ক্লাস করে কিংবা পড়ে বাসায় ফিরলে ভাইকে তার রিফ্রেশমেন্ট এর ব্যবস্থা করতে বলবেন। কিংবা ঘর গুছিয়ে রাখার কথা শুধু কন্যা সন্তানকে না বলে পুত্র সন্তানকেও বলতে হবে।এতে দুজনেই কাজটাকে যেমন সম্মান করবে, ঠিক তেমনি পরিবেশ -পরিস্থিতি বুঝে যে কোন কাজ করার শিক্ষাটা গ্রহণ করবে পরিবার থেকেই।
আমরা বর্তমান প্রেক্ষাপট অবলোকন করলে দেখবো নারীরা আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি পেশায় স্বমহিমায় নিয়োজিত আছেন। তবে সবক্ষেত্রে না হলেও অনেকেই পারিবারিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছেন। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বোঝা-পড়াই পারে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করার সুযোগ করে দিতে। আর যারা নারীর কাজের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন তাদের বোঝা উচিৎ একজন নারী সংসার সামলে, নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রেখে, শিক্ষা, সামর্থকে ব্যবহার করে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে সংসার,সমাজ, তথা দেশের অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখার যোগ্যতা রাখেন। আর সেটার উদাহরণ দেয়ার বোধকরি কোন প্রয়োজন নাই কারণ সচেতন মানুষ মাত্রেই বিষয়টা উপলব্ধি করে থাকবেন।সম্প্রতি সিলেট এমসি কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের বিস্মিত করেছে! কতোটা অমানুষ হলে একজন বিবাহিত নারীর সাথে হাসবেন্ডকে আটকে রেখে এমন জঘন্য, কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে পারে ভাবা যায়! এমন বর্বরোচিত ঘটনা আমাদের দেশে এখন নিয়মিত ঘটে চলেছে! আমরা শুধু কন্যা সন্তান কে সাবধান করবো এটা কর না,ওটা পর না,ওখানে যেও না,এটা ঠিক না, ওটা ঠিক না। কেন? একই সাথে পুত্র সন্তানকেও বিধিনিষেধের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এটা ঠিক না,ওটা ঠিক না,ওখানে যেওনা, যারতার সাথে চল না , বিষয়গুলো তাকেও মানতে বাধ্য করতে হবে। যথেচ্ছাচার করতে দেয়া যাবে না। পরিবার থেকেই লাগাম টেনে ধরতে হবে।
আলোকিত জীবনের পথে সন্তানকে পরিচালিত করতে হবে পরিবার থেকেই। পরিবার মানুষের প্রাথমিক শিক্ষালয় এখানে পারিবারিক যে ভ্যালুস তাকে দেয়া হবে সেই আলোতেই সন্তান পথ চলবে। স্ব স্ব ধর্মীয় বিধিবিধান, আদবকেতা,শিষ্টাচার,ন্যায় -অন্যায়ের বোধ পরিবার থেকেই শেখাতে হবে। তখন অন্যায় করতে গেলেও তার পারিবারিক শিক্ষা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমরা আমাদের সন্তানের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে পারিবারিক বন্ধনের উপর জোর দিবো। পুত্র সন্তানরা নিরাপদ থাকলে, অবক্ষয়ের পথে না হাঁটলেই ঘরে ঘরে কন্যা সন্তানও নিরাপদ থাকবে।তাই চাওয়া নিরাপদ থাকুক আমাদের সন্তানেরা।