রহিমের হাতে আটক আকবর! পুলিশ ঃশান্ডা বাহিনী ব্যর্থ খুনি পাচারে।
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৪:০৩,অপরাহ্ন ১২ নভেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৮৬১ বার পঠিত
সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যাকারী পুলিশের এস আই আকবর আটকের পর
ঘঠনাটি সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ যে নাট্যরূপে সাজিয়েছেন। একেবারে সেই রখম একটি নাটক।
তা এমন ভাব দাড়ায় যে,
”চরিত্রহীন জামাই শশুর বাড়িতে এসে সারাদিন শালিকার সাথে ফষ্টিনষ্টি করে যাবার বেলা শাশুড়ীর দেয়া টিফিনবাক্স বাড়িতে নিয়ে বউয়ের হাতে দিয়ে,হোটেল থেকে তুমার জন্য নিয়ে এসেছি বলে চালিয়ে দেয়া গল্পের মতন ”।
“চুর গরু চুরি করে নিয়ে আসার পর মালিক কোনো ভাবে চুরের আখড়ায় পৌছাতে পারলে চুরের মা বাহিরে এসে বলেন,এসে পড়েছ বাপু!আস আস!সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজে কিংবা কুয়াশায় ভিজে ঠান্ডায় মরেতে মরত সারা রাতে এসে মাত্র ঘুমিয়েছে আমার ছেলে।আর উনি হুড়হুড় করে চলে এসেছেন নিয়ে যেতে।বটি দিয়ে এক কোপ দেব”।
একেই বলে চুরের মায়ের বড় গলা।বেচারা চুরের পাহারাদার।শন্ডা,লাঠিয়াল বাহিনীর নেতা।এদের এমন ব্যবহারের কারণেই দেশের পুলিশকে দেশের জনগণ ঘৃনার চোখে দেখে।থু থু ফেলে দেখলে।এমন কারণেই মানুষ ভাবে পুলিশের “প তে পশু হয়।ল তে লাটিয়া আর শ তে শান্ডা হয়।”
সারা জাহানের মানুষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখেছেন।পুরো ভিডিও জুড়ে (পুলিশ)শান্ডা বাহিনীর কোনো ছায়া পর্যন্ত দেখা যায়নি।
সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যাকারী পুলিশের এস আই আকবরকে কানাইঘাটের রহিম উদ্দিন ওপার সীমান্তের খাসিয়া জনগোষ্ঠীর সহযোগিতায় আটক করে ওপার থেকে এপারে নিয়ে এসেছেন।কোনরখম অত্যাচার না করে সুনিপুণ ভাবে সুরক্ষিত অবস্থায় নিয়ে এসে কানাইঘাট পুলিশের কাছে হস্তান্তরিত করেন। এতো কিছুর পর রহিম উদ্দিনের নাম পর্যন্ত রইলো না আর কোথাও।
গত ১১ অক্টোবর রবিবার সিলেটের বন্দরবাজারে পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করেছিল নগরীর আখালিয়াস্ত নেহারিপাড়ার রায়হান নামের এক যুবককে।দীর্ঘ এক মাস যাবৎ নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন সিলেটের লোকেরা।সিলেটের প্রতিটি অফিস পাড়ার পথ গড়িয়ে নালায় মিশে ছিলো মৃত রায়হানের মায়ের অশ্রুধারা।কেউ কোনোদিন দেখেনি সে অশ্রুধারা,কেউ শোনতে পায়নি সে কান্নার শব্দ।দেখতে কিংবা শোনতেও চায়নি কেউ কোলনোদিন।
সেদিন কেউই এগিয়ে আসেননি রায়হানের মায়ের অশ্রুধারা মুছে দিতে।তবে দেখেছি বিভিন্ন খবরে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবিতে আন্দোলিত সাধারণ জনতার ভিড়ে এসে ভিড় করে ছিলেন নেতা নামধারী অশুভ মুছওয়ালাদের।সাধারণ জনতা এসেছিলেন সেদিন ভাই হারানোর ব্যথায় ব্যথিত হয়ে,তারা এসেছিলেন তাদের দ্বায়িত্ববোধ থেকে,ভালোবাসার টানে।
আর অশুভরা এসেছিলেন ছবি তুলে গণমাধ্যমে প্রচারিত হবার জন্য।
সেদিন অফিস পাড়ার পুলিশ বাবুরা বলেছিলেন অবিলম্বে আসামিদের গ্রেফতার করে রায়হান হত্যার বিচার করা হবে।
সেই একই কথা বলেছিলেন মুছওয়ালা বাবুরাও।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসে ও পাগলের প্রলাপ বখে গিয়েছিলেন।কিন্তু কই,কেউই তো আর কোনো কিছু করেন নি।বরং খুনি আকবরকে পালাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন তারা।
পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আকবরকে সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলা ও ওপারে খাসিয়া সীমান্তদিয়ে পার করে ভারতে পাঠানোর জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।আকবরকে ওপারে পালাতে সহযোগী পুলিশের লোকেরা জনতার হাতে ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে যায়।
ঐ সময় ওপার সীমান্তের খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা খুনি আকবরকে দেখে আটক করে।পরে এপার সীমান্তের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষী প্রাসাদ ইউনিয়নের ডনা গ্রামের মৃত তরফ আলীর সুপুত্র রহিম উদ্দিনকে খবর জানায়।
এমন খবর পেয়ে রহিম জীবনের ঝুকি নিয়ে ভারত সীমান্ত প্রহরীর তোয়াক্কা না করে ওপারে গিয়ে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেদের সাথে কথা বলে খুনিকে নিজ হাতে বেঁধে নিজের সীমানায় ফিরে এসে কানাইঘাট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
এই ভিডিও রেকর্ডটি চারদিকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে সিলেটের (পুলিশ সুপার) শান্ডা বাহিনীর নেতা ফরিদ উদ্দিন আহমদ সিলেটের সকল সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বলেছেন, পুলিশের কিছু ঘনিষ্ট বন্ধুর মাধ্যমে এসআই (বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার সকাল ৯টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঐদিন সন্ধ্যায় এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল আমাদের কাছে একটি তথ্য ছিল সে (আকবর) ভারতে পালিয়ে যাবে। তাই আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারি শুরু করেছিলাম। পরে আজ (সোমবার) তাকে গ্রেফতার করি।’
কেউ আকবরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, কেউ হস্তান্তর করেনি। কিন্তু আমরা পুলিশের সকল কাজে জনগণের সহযোগিতা নিই। তাকে গ্রেফতার করতে আমাদের কিছু বন্ধু সহযোগিতা করেছেন। প্রেস কনফারেন্সে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।তাকে কিছুই বলার সুযোগ দেননি ফরিদ।তিনি কথায় কথায় বলেছেন মফিজ সারের কথামতেই সবকিছু করেছি।
পালিয়ে থাকার ২৮ দিনের মাথায় সোমবার সিলেটের কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত থেকে জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান। তিনি জানান, আকবর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাকে সিলেট সদরে নিয়ে আসা হচ্ছে।
২৮ দিনের মাথায় কানাইঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সিলেট পিবিআই’র পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান জানান, পিবিআই একটি দল কানাইঘাট এলাকায় যাচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ১০ অক্টোবর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় রায়হানকে। এরপর ১১ অক্টোবর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হানের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
এরপর ১২ অক্টোবর এসআই আকবর হোসেনসহ চারজনকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে আকবরকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি পলাতক ছিলেন।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।
উপরের তথ্য সূত্র দৈনিক ইত্তেফাক সহ আরো কিছু পত্রিকা এবং বিভিন্ন ভিডিয় ফোটেজ থেকে নায়া।
পুলিশ যদি এমন নাটকের অভিনয় করে তবে সাধারণ জনতার আস্থা রাখতে পারেন কি করে তাদের উপরে।
শুধি পাঠক সমাজ এক বার চিন্তা করেন।ঐ সময় যদি জনতা খুনিকে পিটিয়ে হত্যা করত।তবে কেমন হতো।কিংবা এমন ভাবে থেতলে দিতেন যাতে মানুষ হিসেবে চেনা যেতনা।তখন কি হতো।অন্তত এইদিক বিবেচনায় রহিম উদ্দিনের নামটি প্রকাশ করে শান্ডা বাহিনীর নেতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ ছিলো।
শামসুর সুমেল
সাংবাদিক
সাংস্কৃতি কর্মী।
মেইলঃshamsursumel@yahoo.com
১০ নভেম্বর ২০২০।