সোসিয়াল মিডিয়া হিসাবে, ফেইসবুকের কল্যাণ ও অকল্যাণ
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৪:১৬,অপরাহ্ন ১২ নভেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৭৯৩ বার পঠিত
প্রথমেই বলে রাখি, কালের আবর্তনে বিজ্ঞানের অবদান মানব জীবনে অপরিসীম। কিন্তু স্থান, কাল , পাত্র অনুযায়ী – বিজ্ঞান মানব জীবনে আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ ? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায় ? ছোট বেলায় এক বিতর্ক প্রতিযোগীতায় প্রতি পক্ষের বন্ধু প্রশ্ন চুড়েছিলেন, বিজ্ঞান বিষ আবিস্কার করেছে, সে বিষ পান করে পৃথিবীর হাজার – হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, সুতারাং বিজ্ঞান মানব জীবনে আশীর্বাদ হতে পারে না–!! প্রশ্নের জবাবে আমাদের দলের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হয়েছিল, বিজ্ঞান বিষ আবিস্কার করেছে, কীট, পতজ্ঞ , মশা, মাছিঁ সহ জীবানু নাশক পোকা-মাকড়কে ধংশ করার জন্য, কিন্তু সেই বিষ পান করে, মানব জাতি যদি আত্নহত্যা করে, তার দায়ভার বিজ্ঞান নেবে কেন? এটা তাদের নির্বোধতা, বোকামি ও আহম্মকের পরিচয় মাত্র।
টিক তেমনি ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্বখ্যাত হাভার্ড ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র, মার্ক জুকার ভার্গ এবং তার সহপাঠি এডুয়ার্ড সাভেরিন,
এন্ড্রু ম্যাক কুলাম, ডাস্টিন মস্কবটিজ, ক্রিস হিউগেস কর্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম , তথা ফেইসবুক প্রতিষ্টিত হয়েছিল। পরবর্তিতে ২০০৬ সালে নির্দিষ্ট ইমেইল এডরেস এর মাধ্যমে সবার জন্য উম্মুক্ত করা হয়। তখন থেকেই এটা সোসিয়াল মিডিয়া হিসাবে গুরুত্ব পুর্ন ভুমিকা রেখে আসছে। সকল দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে , রাষ্ট্রের কর্মচারী, রাজননীতিবিদ, ব্যবসা- বানিজ্য, ফেইসবুক টেলিভিশন, চিত্ত- বিনোদন, খেলা-ধুলা, লেখা – পড়া , প্রেম – ভালোবাসা , নির্বাচনী প্রচার – প্রসার, রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টর সহ , সর্বস্তরের জনগন ফেইসবুকের প্রতি আসক্ত। সবাই সবার মত করে , সবার প্রয়োজনে ফেইসবুক ব্যবহার করেন। এর থেকে যেমন মানুষ উপকারী হচ্ছে, তার পাশাপাশি কিন্তু অপকারের দিক টা ও বার – বার ভিবিন্ন সময়ে , ভিবিন্ন প্রেক্ষাপঠে উঠে এসেছে। যেমন অবাধে প্রেম /ভালোবাসায় আসক্ত হওয়া, ইয়াং জেনারেশন গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা, পাঠদানে অমনযোগী হওয়া, ফেইসবুক লাইভে এসে আত্নহত্যা করা , গ্রামের মর্জিনা থেকে ক্যাটরুনা ক্যাফ এর আকার ধারন করে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া,, সলীম আলী থেকে নবাব সলিম উল্লাহর অভিনয় করে সমাজে প্রভাব বিস্তার করা, ফেইক আইডি দিয়ে প্রতারনা করা , ইত্যাদি – ইত্যাদি। এটা ও একটা সামাজিক ব্যাধি , মানবিক মুল্যবোধের অবক্ষয়, কিংবা অপব্যবহার বলা যেতে পারে। তার দায়ভার হিসাবে কোন ভাবেই বিজ্ঞানের অবদান কিংবা মার্ক জুকার ভার্গদের দায়ী করা যাবে না।
কথায় আছে, দুঃসংবাদ বাতাসের আগে বেড়ায়। কিন্তু সুঃসংবাদ মানুষ জেনে ও না জানার ভান করে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে, ফেইসবুকের ভুমিকা অপরিসীম। বিশেষ করে বাংলাদেশের আইনের শাষন বাস্তবায়ন, অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন, আইনের ধারাকে গতিশীল করন, ঘোষ – দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও আইনের আওতায় নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রচার ও প্রসারে লিপ্ত থাকার মত, উল্লেখ্য যোগ্য প্রেক্ষাপট গুলোতে ফুইসবুকের ভুমিকা বর্ননাতীত। সিলেটের শিশু রাজন হত্যা থেকে শুরু করে , পুজারানী, সামিউল আলম, বুরগুনার রিফাত হত্যা, নুসরাত হত্যা, নারায়গঞ্জের ট্রিপল মার্ড়ার / সিক্স মার্ডার, মামা বাহিনী, ভাই বাহিনী, কালো মানিক, কাটা জাহাঙ্গির, পিচ্চি বাহিনী, পাপিয়া, পাপলু, সাহেদ, সম্রাট, ইরফান সেলিম, বালিস কান্ড, পুকুর খনন, খিচুড়ি রান্না, সিলেটের বহুল আলোচিত এবং সমালোচিত রায়হান হত্যা মামলা সহ বাংলাদেশের আনাচে – কানাচে ঘটে যাওয়া অসংখ্য অন্যায় – অবিচার, ব্যবিচার, অত্যাচার , ঘোশকোর, শোধকোর, ও দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উম্মোচন ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে ফেইসবুকের কল্যাণে। আগে যে সময় কোন অন্যায় অত্যাচার , ব্যবিচার, কু – হত্যা, সংবাদ আসতে যেখানে ২৪ ঘন্টা কিংবা সপ্তাহ খানেক লেগে যেত, ভিবিন্ন ধাপ / উপধাপ অতিক্রম করে উর্ধতন কর্মকর্তা কিংবা শংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হত, সেখানে মুহুর্তের মধ্যেই ফুইসবুকের কল্যাণে ভাইরাল করে যতাযত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর সম্ভব হচ্ছে, এবং এর থেকে যেমন আইন শৃংখলা বাহিনী তাদের আইনের ধারা বাস্তবয়ন করতে সহজ হচ্ছে তেমনি ভোক্তভোগি ও বিচার পাওয়ায় পথ সহজলভ্য হচ্ছে, অপরাধীরাও পালানোর সুযোগ না পেয়ে আত্ন সমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
সুতারাং নির্ধিধায় বলা যেতে পারে এ যাবৎ কালের সকল শতাব্দীর শ্রেষ্ট উপহার হচ্ছে ,, ফেইসবুক ,,
বিশ্বের এমন কোন দেশ খুজে পাওয়া যাবে না , যেখানে ফেইসবুকের ব্যবহার এবং এর উপকারীতা মানুষ পাচ্ছে না . তবে হে বিশ্বের উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ফেইসবুকের অপব্যবহার হয়তবা একটু বেশী. তার জন্য ও রয়েছে নানাবিধ কারন. বিশ্ব যেখানে মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার চিন্তায় মগ্ন , বাংলাদেশ সেখানে বাস্তবিক অর্থে এখনও জীবন যুদ্ধে উন্নত জীবনের প্রত্যশায়, নির্ভীক সৌনিকের ভুমিকা পালনে ব্যস্ত। মৌলিক চাহিদা পুরনে অনেক সময় মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হতেই পারে। তবে আশার বাণী শীঘ্রই বাংলাদেশের সর্বত্র ফেইসবুক জনজীবনে কল্যাণই বয়ে আনবে। সমাজের সর্বত্র এর সঠিক ব্যবহার ও সঠিক প্রয়োগ এর মাধ্যমে, সুন্দর, সুষ্ঠু ও বলিষ্ট জাতি গঠনে সহায়ক হবে।
লেখক — শেখ জাফর আহমদ,
যুক্তরাজ্য প্রবাসী।