আমি কেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন সদস্য?
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৭:১৫,অপরাহ্ন ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ | সংবাদটি ৫৬১ বার পঠিত
প্রথমেই বলে রাখি – নিজে কিছু অর্জন করলে যে গুরুত্ব থাকে , পারিবারিক ভাবে তা পাওয়ার মধ্যে কিন্তু তেমন গুরুত্ব নেই। পারিবারিক সুত্রে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন সদস্য হিসাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু। তখন ১৯৯৬ অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র মাত্র, জাতীয় নির্বাচনের আনা গোনা চলছে। চথুরদিকে নর্বাচনী প্রচারনায় সবাই ব্যস্ত। মাঠে – ঘাটে – হাঠে/ স্কুল – কলেজ- ইউনিভার্সিটি / গ্রাম – গঞ্জ পাড়া মহল্লা সব জায়গায় নির্বাচনী হাওয়া। শ্লোগানে – শ্লোগানে মুখরিত আকাশ – বাতাস। স্কুল থেকে যাওয়া আসা এবং অবসর সময় যে কোন রাজনৈতিক দলের সভা – সমাবেশ হলে, পিছনের দিকে চুপচাপ বসে থাকতাম। তাদের কথা গুলো মনযোগ সহকারে শ্রবন করতাম। তেমনি একদিন একদল বিশাল মিছিল বের করেছে,, তারা শ্লোগান দিচ্ছে — হরে কৃষ্ণ হরে রাম- শেখ হাসিনার বাবার নাম// হরে কৃষ্ণ হরে রাম শেখ মুজিবের বাবার নাম। শুনে বেশ অবাক! তাহলে কি আওয়ামীলীগের পুর্ব – পুরুষেরা কিংবা প্রতিষ্টাতারা হিন্দু ধর্মের উত্তিরাধিকারী( অনুসারী)। আরেক দিন আরেক সভার শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য- হিন্দুদের দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট দিবেন না , আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় যেতে দিবেন না , নতুবা বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে যাবে , হিন্দুরা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠবে,, দেশে ইসলাম শিক্ষা ব্যহত হবে , মসজিদে আযানের পরিবর্তে হড়ুড়ু– হুড়ুড়ু ধ্বনি – প্রতিধ্বনিত হবে ( হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মোটেই হেয় প্রতিপন্ন করছি না, বরং সকল ধর্মের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে) অথচ আগের দিন ইসলাম শিক্ষার ক্লাসে পড়লাম, বাংলাদেশে প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলমান বাস করে। তাহলে ৪০ শতাংশ মানুষ যদি আওয়ামীলীগ সাপোর্ট করে, আর তার মধ্যে ১০% হিন্দু ধর্মের লোক থেকেই থাকে, তাহলে তো বাকি ৩০ শতাংশ লোক মুসলমান হওয়ার কথা। হিসাব টা যেনো কোনো ভাবেই মিলাতে পারছিলাম না। অবশ্য পুরাপুরি হিসাব মিলানোর মত বয়স ও তখন ছিল না , তবে এটুকু নিশ্চিত ছিলাম , এর মধ্যে কোন চালাকি আছে, মিথ্যাচার আর অপবাদের গন্ধ আছে। ৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ কিন্তু জয়লাভ করেছিল এবং পাচঁ বছর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় উপরের কোনটাই বাস্তবে রুপ নেয়নি। তখন আর আমার মতো লক্ষ তরুনদের বুঝতে কোন অসুবিধা হলো না — এটা ছিল নিচক একটি অপ প্রচার কিংবা ধর্মের দোহাই দিয়ে সহজ সরল মানুষকে ঠকানোর একটি পন্থা মাত্র। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের জ্ঞানের পরিধি ও বাড়তে থাকে, জানার কৌতুহল থাকে , সেই সুবাদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠন প্রক্রিয়া , লক্ষ ও উদ্দেশ্য এবং এই দিলের কিছু কার্যাবলী সম্মানীত পাঠকদের সাথে নিজের মত করেই শেয়ার করতে চাই।
প্রথমত বাংলাদেশের যে কয়জন আলোচিত সুর্য সন্তান রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ইয়ার মোহাম্মদ খান , শামসুল হক, মুলত তারাই আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টাতা,, ( ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন আওয়ামীলীগের আত্নপ্রকাশ হয়) এখানে তো হিন্দু ধর্মাবলম্বী কাউকে দেখছি না। বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে, সময় আর প্রয়োজনের তাগিদে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। (যদিও ইতিমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নামকরন এর বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল) মুলত শেখ মুজিবই আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা করেছিলেন। তার নেতৃত্বে পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের দাবী দাওয়া ও নায্য অধিকার নিয়ে যখন আন্দোলন আর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পশ্চিম পাকিস্তান এবং পশ্চিমা জনগোষ্ঠীর নজর কাড়ে। সম্মানীত পাঠক যেহেতু সেই সময় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ছাড়া – (বাংলাদেশ সৃষ্টির পর যে সকল দলের জন্ম হয়েছে ) অন্য কোন রাজনৈতিক দলের জন্মই হয়নি, সুতারাং আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, সে কথা বলার অপেক্ষা থাকে না।
এখন প্রশ্ন হলো যে দলের নেতৃত্বে, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো?
যে নেতার চার মুল নীতির ভিত্তিতে যুদ্ধ সংগঠিত হলো?
সেই দল কিংবা সেই দলের অনুসারীরা ইসলাম বিদ্ধেশী হলো কি ভাবে?
তার জবাব খুজার আগে আসুন, সদ্য আত্নপ্রকাশিত বাংলাদেশের দিকে একটু ফিরে থাকাই। যদিও আপনারা সবাই অবগত তারপর ও শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই,, কাকরাইল মসজিদের জায়গা বরাদ্ধ, বিশ্ব ইজতেমার ময়দান বরাদ্ধ, ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্টা, বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসাবে ঘোষণা, ইসলামে হারাম মদ – জুয়া – দেহ ব্যবসা রাষ্টীয় ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বেতার ও টেলিভিশন এর কার্যক্রম শুরু করার আইন কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান করেছিলেন। শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর, যারা ক্ষমতা দখল করেছিলেন তারা কিন্তু সরকারি ভাবে মদ – জুয়া- নাইটক্লাবের লাইসেন্স দিয়েছেন। অনেক অবৈধ কাজকে বৈধ করার পন্থা বের করে দিয়েছেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগকে বিভিন্ন পন্থা ও কলা কৌশল অবলম্বন করে ক্ষমতার বাহিরে রাখা হয়েছিল। এই ২৫ বৎসর যে ইসলামের স্বর্নযুগ ছিল তার কিন্তু কোন নজির নেই। বরং ৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে, ঘুনে ধরা রাষ্ট্রকে যখন সপাই করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল ,, তখন আবারো বাধা। গ্রামে / গঞ্জে – শহরে বন্দরে আবারো অপপ্রচার, ইসলাম চলে যাচ্ছে, সরকার কর্তিক সকল ধর্ম প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, ফতোয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে,, যদিও আপনার / আমার আশে পাশের পরিচিত কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে বলে কোন প্রমান নাই। ২০০১ – ২০০৫ সালে ইসলামের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর দারা ইসলামের আমুল কোন পরিবর্তন কিংবা রাষ্টীয় ভাবে ইসলাম ধর্মকে সু প্রতিষ্টিত, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মত কোন উল্লেখ্য যোগ্য প্রমান ও নাই।
২০০৬ – ২০০৮ সালের মাইনাস ২ ফর্মুলাকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে আওয়ামীলীগ আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসে। ২০১৭ সালের ১১ই এপ্রিল গন-ভবনে সরকার এবং বাংলাদেশ কমি- মাদ্রাসা বোর্ডের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এক ফলপ্রসূ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় রাষ্ট্রীয় ভাবে কমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিতকে মাস্টার্স পাশের সমতুল্য মর্যাদা প্রদান করা হয়। মোট কথা কমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা যাতে রাষ্টীয় ভাবে সকল ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে সে জন্য মাদ্রাসার সিলেবাসে কমপক্ষে H.S.C পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, অংক, সমাজ বিজ্ঞানকে বাধ্যতামূলক পাঠদান করার জন্য প্রস্তাব করেছিল। শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা / উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ এবং সৌদি সরকারের সহযোগিতায় একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মসজিদ নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। মুসলমান ধর্মের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব ও একটি অন্যতম। বাংলাদেশের মুসলিমরা যাতে অনায়াসে হাজ্জ্ব পালন করতে পারে সেজন্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবদ্দশায় বিশ্ব নেতাদের এক কনফারেন্সে তৎকালীন সৌদি বাদশার সাথে দ্বীপাক্ষীক ও ফলফ্রসু আলোচনা হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর আর দল গঠনের প্রায় ৭০ বছর পর কিছু সংখ্যক মানুষ মনে করেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ হচ্ছে — ইসলাম বিদ্ধেষী, ইসলামের পরিপন্থী কিংবা ধর্ম বিরোধী একটি দল। তবে হে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দলের মধ্যে গোটা কয়েকটি চারপোকা / তেলাপোকা রয়েছে। তেলাপোকা যেমন তাদের প্রয়োজনে সারা বাড়ীর দেওয়াল ঘুরে বেড়ায়, ঠিক তেমনি দলের মধ্যে এবং দলের বাইরে স্বার্থনেষ্বী কিছু মহল আছে – যারা নিজেদের প্রয়োজনে দলকে ব্যবহার করতে চায়। তারা অনেক সময় ধর্মের নামে উস্কানী দেয়, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়,, তার দায়ভার দলের নয় বরং সেটি হচ্ছে নিজের ব্যক্তিত্ব জাহির করার এক উত্তম পন্থা। বর্তমান সমাজে হাই সোসাইটি আর উচ্চ শিক্ষিত সমাজের অনেকেই ধর্ম – কর্ম পালন ও বিশ্বাস করেন না । তারা নিজস্ব বলয়ে অবস্থান করছেন বিভিন্ন দলে – বিভিন্ন গোত্রে।
সুতারাং উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলোর সাথে যেহেতু আওয়ামীলীগ ও ইসলাম ধর্মের সাথে কোন সাংগর্সিকতা নেই বরং ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতি ও সম্মান প্রদর্শন করে, সুতারাং আমি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন সদস্য হিসাবে মোঠই দ্বিধা বোধ করি না বরং গর্ব করি।
লেখক – শেখ জাফর আহমদ
যুক্তরাজ্য প্রবাসী (রাজনৈতিক ও সামাজ কর্মী)