চলে গেলেন গাফফার ভাই, স্ত্রীকে কষ্ট দিয়েছি, উনি কি (প্রধানমন্ত্রী) ওয়াজেদ মিয়াকে সুখ দিয়েছে?
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫৭:০১,অপরাহ্ন ২১ মে ২০২২ | সংবাদটি ১০৪৫০ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রিয়জনের ফোন। গাফফার ভাই আর নেই। অনেকটা কষ্ট পেলাম। এক সময় গাফফার ভাইর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল গভীর। গাফফার ভাইকে চ্যানেল আই ইউরোপ সম্মানীত করেছিল। একবার নয় দুবার নয় কয়েকবারই তার জন্মদিন চ্যানেল আইর লন্ডন ষ্টুডিওতে লাইভ করেছিলাম। একবার লাইভ জন্মদিন পালন করতে গিয়ে গাফফার ভাই লন্ডনের বাঙালী কমিউনিটিকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করে বসেন। বলে বসেন সিলেটিরা লাঙ্গল টু লন্ডন। আমি বিব্রত হয়েছিলাম। বিব্রত হয়েছিল লন্ডনের বাঙালী কমিউনিটি। এর পর আর গাফফার ভাইর জন্মদিন চ্যানেল আই লন্ডন ষ্টুডিওতে পালন করা হয়নি। অবশ্য ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারেরর অব্যাহত চাপে ঢাকা চ্যানেল আই লন্ডনে চ্যানেল আইর সম্প্রচার বন্ধ করার লিখিত আদেশ দিলে আমি সেটি বাধ্য হয়েই বন্ধ করি। ২০১৬ থেকে গাফফার ভাইর সাথে আমার যোগাযোগও অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। কারন গাফফার ভাইর আশে পাশে যে সব পুরুষ মহিলারা বিচরন করতেন তাদের কেউ কেউ গাফফার ভাইকে বুঝাতে সক্ষম হন যে আমি এন্ট্রি শেখ হাসিনা সরকার। এন্ট্রি আওয়ামীলীগ এবং এন্ট্রি গাফফার ভাই। সেসব কথা গাফফার ভাই একদিন আমাকে বলেছিলেন। আমি অবশ্য সেসব কেয়ার করিনি। কারন এবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর যাদেরকে লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আর মুক্তিযুদ্ধা বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে ওরা অনেকেই এই পবিত্র মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধাদের নিয়ে ব্যবসা করছে। তারা আমার ব্যপারে আজে বাজে কথা বলে অনেকেরই কান ভারি করেছে। আমার ব্যপারে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে সরকারকে। অবশ্য এ কাজটি নিখুতভাবে করেছে আমার অফিসের কিছু মানুষ এবং তৎকালীন সময়ে লন্ডন হাইকমিশনের মেলেটারী এটাচী বর্তামান মন্ত্রী এনামুল হক শামীমের ভাই ব্রিগেডিয়ার আমীন।
সে যাক। গাফফার ভাই লন্ডনের বাঙালী কমিউনিটিতে একের পর এক পত্রিকা করেছেন। বাংলা ভাষার জন্য তিনি কাজ করেছেন। বাংলা ভাষা সংস্কৃতিকে প্রতিষ্টিত করার জন্য সারাটা জীবন তিনি কমিউনিটির পাশে ছিলেন। লন্ডনের সিলেটি কমিউনিটির সমালোচনাও করেছেন আবার পাশেও থেকেছেন।
গাফফার ভাই অনেক কিছুই না করতে পারতেননা। যে কেউ তার বাসায় যেতে পারতো। সময় দিয়েছেন। কত কবি সাহিত্যিকরা যে তাকে বিরক্ত করেছেন তার কোনো হিসেব নেই। আমি অবশ্য গাফফার ভাইর কাছে কখনো লেখালেখির জন্য যাইনি। কারন প্রথমত আমি কবি সাহিত্যিক ছিলামনা। দ্বিতীয়ত আমার লেখা কাউকে দেখানোটা পছন্দ করিনা। গাফফার ভাই অবশ্য একাবর বলেছিলেন তোমার সাথে কথা বলে আরাম পাই। তোমি কবিতা নিয়ে আসনা। লেখালেখি নিয়ে আসনা। নতুন নতুন কবি সাহিত্যিকের জন্ম হচ্ছে আর কি সব লিখে নিয়ে এসে- এসেই বলে তা দেখে দেওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে কিছুসংখ্যক আজেবাজে মহিলাদের যাতায়াতে তিনি বিরক্ত হতেন কিন্তু না করতে পারতেননা। একবার তার বাসায় গিয়েছিলাম আরেকজনকে নিয়ে। যাকে নিয়ে গিয়েছিলাম তিনি গাফফার ভাইর সাথে কথা বলছেন আমি পাশের রুমে বসে গাফফার ভাইর মেয়ে বিনুর সাথে কথা বলছিলাম। বিনু আমাকে বলেছিলেন তোমি ফয়সল চৌধুরী? বলেছিলাম হ্যা। বিনু বলেছিলেন তোমি আমার বাবাকে নিয়ে জন্মদিন পালন করো। আজেবাজে মানুষকে নিয়ে এসো ষ্টুডিওতে এনে আমার বাবার পাশে বসিয়ে দাও, আমার মা-র আতœা কষ্ট পায়। ভবিষ্যতে এ কাজ আর কখনো করোনা। আই ডিমান্ড এপোলজি ফ্রম ইউ। আমি অনেকটা অবাক হয়েই বিনুর দিকে থাকিয়েছিলাম। পাশের রুম থেকে গাফফার ভাই কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞাস করেছিলেন বিুন কি তোমাকে কিছু বলেছে? আমি বলেছিলাম না গাফফার ভাই- কনভারসেশন এখনো শেষ হয়নি। দেখি মেয়েটা কি বলে। আমি রুমে এসে বিনুকে জিজ্ঞাস করি কেন আমি এপোলজি দেব। বিনু বলে ঐ যে———-। আমি কথা বাড়াইনি। বিনুকে টাট্রার চলে বলি এপোলজি তো একটু ভেবে চিন্তে দিতে হবে। সময় দাও। পররবর্তীতে এপোলজি দিব। বিনুকে আমার এপোলজি দিতে হয়নি। হঠাৎ করেই শুনলাম বিনু এ পৃথিবী ছেড়ে গাফফার ভাইর আগেই চলে গেছে।
বেশ কয়েক বছর আগের কথা গাফফার ভাইর বাসায় গিয়েছিলাম তাকে দেখতে। গিয়ে দেখি মন খারাপ। জিজ্ঞাস করি কি হয়েছে গাফফার ভাই? বললেন তোমাকে বললে তো লিখে ফেলবে। আরেক ঝামেলা হবে। বলেছিলাম বলতে পারেন লিখবনা। বললেন প্রধানমন্ত্রী আমার উপর কিছুটা মনক্ষুন্ন- বলেছিলাম কেন? বললেন আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেছেন আমি নাকি আমার স্ত্রীকে কষ্ট দিয়েছি। আমি না বুঝেই বলে ফেলেছিলাম, দিয়েছেন তো, প্রধানমন্ত্রী তো ঠিকই বলেছেন। বললেন কিভাবে কষ্ট দিলাম? বলেছিলাম এই যে এত মহিলা ভক্ত আপনার। ভাবী তো কষ্ট পেয়েছেনই। কিন্তু কোনো কিছু বলেননি। গাফফার ভাই আমাকে পাল্টা আক্রমন করে বলেছিলেন তোমি কি তোমার স্ত্রীকে সুখ দিয়েছ? উনি কি ওয়াজেদ মিয়াকে সুখ দিয়েছে? অন্যের সমালেচানা করার আগে নিজেরটা বিবেচনায় নিয়ে আসবা। আমার স্ত্রীকে আমি কতটুকু ভালোবাসি তা আমি এ পৃথিবীতে যখন থাকবনা তখন বুঝতে পারবে।
শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক গাফফার ভাই নাকি ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রীর কবরের পাশেই যেন তাকে সমাহিত করা হয়। তাহলে যারা গাফফার ভাইকে এতদিন সমালোচনা করেছিলেন তারা কি ভৃল?গাফফার ভাইকে আল্লাহ যেন তার সব গুনাহ মাফ করে জান্নাতের মেহমান করে নেন আমীন।
লেখক রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সাবেক ব্যকস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
20/5/2022 ইংরেজি লন্ডন শুক্রবার