গাফফার চৌধুরীর লাশকে কেন কষ্ট দিচ্ছেন? রুবী হকের বিদায়!!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৪:২৯,অপরাহ্ন ২৭ মে ২০২২ | সংবাদটি ৬৫৪ বার পঠিত
(এক) মৃত্যু কাউকেই রেহাই দিবেনা। আমরা সবাই মৃত্যুর কথা ভূলে যাই। কে একজন বলেছিলেন দু চোখের দুরত্ব যতটুকু তার চাইতে কম দুরত্ব হচ্ছে মৃত্যু। চার পাচ মাস আগের কথা, মনি ভাইর কাছে থেকে শুনেছিলাম রুবী হক অসুস্থ। বৃটেনের বাঙালী কমিউনিটির পরিচিত জুটি মুজিবুল হক মনি এবং তার একমাত্র স্ত্রী রুবী হক। মনি ভাই যেখানে রুবি হক সেখানে। আমার খুবই হিংসা হতো। আমি মাঝে মধ্যে রুবি হককে ক্ষেপানোর জন্য বলতাম সারাক্ষন স্বামীর হাত ধরে বসে থাক কেন? রুবী হকের সাথে আমার চমৎকার একটি সম্পর্ক ছিল। রুবি আমার স্ত্রী ডাক্তার আনোয়ারা আলীর বান্ধবী। লন্ডনে একই স্কুলে পড়ালেখা করেছে। রুবী বলতেন স্বামীর হাত ধরব না তো কি করব? লন্ডনে আমার একটি বাজে রেপুটেশন গড়ে উঠেছে, আমার সমালোচক যারা তারা বিষয়টিকে প্রচার করেছেন ভালোভাবে, আমি নাকি বিশ্বপ্রেমিক। রুবী দেখলেই মনি ভাইকে অড়াল করে বলতেন আর কত প্রেম করবা এখন বাদ দাও। রুবীকে বলেছি রুবী আমার ব্যপারে যা শুনেন তা সত্যি না। সে যাই হোক। রুবী লন্ডনের বাঙালী কমিউনিটির এক পরিচিত মুখ ছিলেন, তিনি ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির নেত্রী ছিলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্বামীকে সাথে নিয়ে দাপটের সাথে কাজ করেছেন রুবী। গতকাল বিকেলে অলস সময় কাটিয়ে মোবাইল অন করেছি, হোয়াটসআপে ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক মনজের চৌধুরীর ভয়েস মেসেজ “বস মনি ভাইর স্ত্রী মারা গেলেন“। আমি অবাক হই। বয়স তো খুব একটা বেশী হয়নি রুবী হকের, এত তাড়া কিসের? ইদানিং মৃত্যুকে নিয়ে আমি ভাবি। আজ রুবী চলে গেলেন, কাল হয়তো আমার ডাক আসবে। বাঙালী কমিউনিটিতে তাহলে কি গড় আয়ু কমে গেল নাকি? ৫০/৬০ বছর বয়েসে তো অনেকেই চলে যাচ্ছেন। আমি ভাবি আমার বয়স এখন ৫৫- তাহলে কি যে কোনো সময় ডাক আসতে পারে? মনি ভাই এখন কি করবেন? রুবী ছাড়া কিভাবে মনি ভাই সময় কাটাবেন? মনি ভাই এবং রুবী হকের মধ্যে যে বন্ধন ছিল সেটি আমাদের কমিউনিটিতে সচারচর দেখা যায় না। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যেন দা কুড়াল। যেমনি আওয়ামীলীগ বিএনপির সম্পর্ক। মনি ভাই এবং রুবীর ছেলে মেয়েদের কি হবে? রুবির বোন নাকি ষ্টেটাস দিয়েছে আমার আপু চলে গেল। আমি কোনো ষ্টেটাস দেইনি। রুবীর মৃত্যুর পর ফেইসবুক ভাসিয়ে দিয়েছেন সবাই। রুবীর সব ধরনের ছবি দিয়ে আপলোড করছেন। বাঙালী কমিউনিটির মানুষগুলো কেমন যেন হয়ে গেছে। ফেসবুক একটা পেয়েছে কোথায় কি পোষ্ট করবে বুঝেনা। একজন মহিলা মানুষ মারা গেছে তার ছবি পোষ্ট করা কি উচিৎ? রুবীর মৃত্যুর পর ছবি পোষ্ট করেছে রুবী যে বিয়ে বাড়ীতে সেজে গুজে গিয়েছেন সেই ছবিও। আমি আগে না বুঝে মহিলাদের সাথে ছবি তুলতাম, পোজ দিতাম, একদিন আমার মা বলেছিলেন কেন হুদাই পাপ করো, এতা ক্লোজ হয়ে ছবি তোলার দরকার কি পরনারীদের সাথে? তারপর আর ছবি তুলিনা। সে যাক, রুবীর ছবি পোষ্ট করার কারনে তার আতœা কি কষ্ট পাবে? যারা ছবি পোষ্ট করছেন তারা কি বিষয়টি ভেবে দেখবেন? কোনো কিছুই ধার ধারেনা, অর্ধেক বয়সী কিছু বুইড়া মহিলারা । বয়স ৫০ এর উপরে ১০০ হয়ে গেছে কোনো খেয়াল নেই সেদিকে। সারাক্ষন ছবি পোষ্ট করে। তাকে দেখতে যে বেখাপ্পা দেখায় সে কথাগুলো কে বলবে? ছবি পোষ্ট করার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নেওয়া উচিৎ।
সে যাক, রুবীর জন্য প্রার্থনা আল্লাহ যেন রুবীর সব গুনাহ মাফ করে দিয়ে রুবীকে পরজন্মে বেহেস্তের সর্ব্বোচ্চস্থানে বসবাসের সুযোগ করেন। কথা আছেনা “যদি স্বামীর আগে স্ত্রী যায় মরিয়া- লোকে বলে ধন্য ধন্য বেহেস্তে যাবে চলিয়া। আমি বিশ্বাস করি মুজিবুল হক মনি ভাই যেভাবে রুবীকে ভালোবাসতেন রুবী বেহেস্তে চলে যাবেন ইনশাল্লাহ। কারন রুবীর মৃত্যু তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর হাতেই হয়েছে।
(দুই) একুশে গানের রচিয়তা আব্দুল গাফফার চৌধুরী মারা গেলেন গত সপ্তাহে। তার লাশ দেশে নিয়ে যাবেন বলে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুনা জানিয়েছেন। মুনা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই গাফফার ভাইর লাশ নাকি দেশে যাবার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন তারা। সব ঠিক থাকলে আাগামী শনিবার লাশ ঢাকা পৌছবে। আমরা যতকুটু জানি তিনটি কাজ করার ধর্মীয় তাগিদ রয়েছে। (এক) যুবতী ছেলে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া। (দুই) আজান পড়ার সাথে সাথেই নামাজ আদায় করা। (তিন) মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা।
সিলেটি একটি প্রবাদ রয়েছে, “ জিতে হইছেনা নলের সাটি মরলে হইবো শীতল পাঠি“ অর্থাৎ জীবিত থাকতে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ভাগ্যে জুঠেনি বাংলাদেশের কাছ থেকে বাশের পাঠি আর মরলে পাবেন তিনি শীতল পাঠি। জীবিত থাকতে বাংলাদেশ সরকার আওয়ামীলীগ বিএনপি যারাই ক্ষমতায় থাকনা কেন তাদের শ্রেষ্ট সন্তানদের কোনো মুল্যায়ন করেনা, মৃত্যুর পর করে ফাজলামী । জীবিত যখন ছিলেন, তখন একজন সাংবাদিক, একজন লেখক, একজন কবি মুল্যায়িত হয় তিনি কার লোক কোন দল করেন ইত্যাদি। তিনি কাকে সমর্থন করেন, বিএনপি না আওয়ামীলীগ? মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার জন্য গাফফার ভাইর লাশকে কেন কষ্ট দেয়া হচ্ছে? এই যে গাফফার ভাই বছরের পর বছর বৃটেনে বসবাস করেছেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র কি তাকে একবার বলেছিল গাফফার চৌধুরী আপনি জাতীর শ্রেষ্ট সন্তান- আপনি কেন বিদেশে পড়ে থাকবেন? আপনি দেশে আসুন দেশ আপনাকে চায়। এ দেশ আপনার। বলেনি। শুনেছি অসুস্থ হওয়ার পর গাফফার ভাই নাকি প্রধানমন্ত্রীর ফোনের অপেক্ষা করতেন, কিন্তু তিনি ফোন করেননি। বাদশাহ ভাই, আমিনুল হক বাদশাহ, বঙ্গবন্ধুর সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারীকেও প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে চোখের দেখা দেখেননি।মৃত্যুর পর মায়া কান্না করে কি লাভ? ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে বলা আছে যে মাটিতে একজন লোক মরবে সে মাটিতেই তাকে দাফন করে নিতে। আমি মনে করি আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মাটি হবে বৃটেনে কারন তিনি বিগত ৫০ বছর এই বৃটেনের মাটিতে বৃটেনের আলো বাতাসে লালিত পালিত হয়েছেন, বৃটেনের কাছে তার ঋন অনেক, তার অন্ন বস্ত্র চিকিৎসা, তার সন্তানের লেখাপড়া এই বৃটিশ সরকারই বহন করেছে। বাংলাদেশ তাকে বিভিন্ন সময় পুরস্কারের বদলে তিরস্কার করেছে। অতএব তাকে বৃটেনেই সমাহিত করা হউক।
শেষ কথাঃ গাফফার ভাইকে নিয়ে যারা ব্যবসা করেছেন, যারা গাফফার ভাইর কুলে বসে ফাজলামী করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি দয়া করে নিজেকে জাহির করার জন্য আজে বাজে লিখবেননা, আতেলগীরি দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করবেননা। দোষেগুনে মিলেই মানুষ। গাফফার ভাইও দোষ ত্রুটির উর্ধ্বে ছিলেননা। তিনিও বিভিন্ন সময় ধর্মকে ঠেনে এনে আজেবাজে কথা বলেছেন, যার কোনোই দরকার ছিলনা। আমি মনে করি গাফফার ভাই এখন সব বিতর্কের উর্ধ্বে। শেষ বিচারের মালিক যিনি তিনিই এখন তার জিম্মাদার। তিনিই বিচার করবেন ভালো মন্দের। অতএব প্রগতিশীল আর প্রতিক্রিয়াশীল “জাষ্ট শার্ট ইয়োর ব্লাডি আগলী মাউথ———প্লিজ। গাফফার ভাইকে শান্তীতে ঘুমাতে দাও।
লেখক সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
লন্ডন ২৬ মে ২০২০২ ইংরেজী বৃহস্পতিবার