ছাগল কি কখনো বেড়ার তোয়াক্কা করেছে !
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৯:১১,অপরাহ্ন ০৪ জুন ২০২২ | সংবাদটি ৩২৮ বার পঠিত
নির্বাচন বাঙ্গালী জাতির কাছে একটি উৎসব।আর সে উৎসব বাঙ্গালী জাতির পূর্বজনমেও ছিলো এবং উত্তর জনমেও তা উৎসব হয়েই থাকবে।আর তাই বাঙ্গালী জাতি বিশ্বের যে দেশেই থাকুক না কেন তারা সে দেশের নির্বাচনকে তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির ভাগবাটোয়ারা হিসেবেই মনে করেন।সে দেশের একটা নিজস্ব সভ্যতা এবং নিয়মকানুন আছে।বাঙ্গালীরা সে সভ্যতা এবং নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করেন না।তারা সেখানে তাদের নিজেদের দেশীয় ঘৃণ্য সকল সভ্যতা এবং নিয়ম কানুন চালু করেন।এ নিয়ে ওখানকার স্থানীয় জনতা বাঙ্গালী জাতিকে বেশ আঁড়চোখেই দেখেন।তারা তাদের সভ্যতার কারনে কিছু বলতে পারেন না,কিংবা বলেন না।কিন্তু সেটাকে তারা ভালো চোখে ও দেখেন কনা।
এইতো মাত্র কয়েয় সাপ্তা হয়েছে।গত ৫ মে ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বৃটেনের কাউন্সিল নির্বাচন।
সদ্য হয়ে যাওয়া সে নির্বাচনে পুরো বৃটেন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো বাঙ্গালী প্রার্থীদের সরব আনাগোনা।সে নির্বাচনে বেশ ক’জন মেয়র সহ অসংখ্য কাউন্সিলর প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিল একটি বাঙ্গালী অধ্যুষিত অঞ্চল।তাই এখানকায় মেয়র সহ ৪৫ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ৩/৪ জন ছাড়া বাকি সকলেই বাঙ্গালী প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
[[খাবার লোভে ছাগল কি কখনো সব্জি ক্ষেতে দেয়া বেড়ার তোয়াক্কা করেছ কিংবা দেয়ালে চড়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত পোষ্টার লাগানো দেয়ালের কিংবা গাছের পাতা খেতে গাছের মগডালে চড়র ! ]]
সে সকল নির্বাচিত প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে আঙ্গুল তুলার মতন সাহস আমি রাখিনা।তবে বুক ফুলিয়ে সাটা বলতে পারি তারা যে দেশে বসবাস করেন সে দেশের সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি তাদের কোনো ভালোবাসা কিংবা তার ধারণাই নেই।কিংবা তাদের নির্বাচনী প্রচারণা ব্যবস্থা ছিলো নেহায়েত গরীবি হালতের।
এ দেশে দা কুড়াল লাঠি বন্দুক নিয়ে রাস্থায় আসার রেওয়াজ নেই।আইনের কারণে বাঙ্গালী জনতা সে রেওয়াজ চালু করতে পারছেন না।কিন্তু তাদের চিন্তাভাবনায় দেশীয় সংস্কৃতি সদা জাগ্রত।
তাদের এমন আচরণের কারণে লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস বারায় নির্বাচনে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।সে এক বড় লজ্জার ব্যাপার।
আপসোস হয়,যে কারণে এবারের নির্বাচনে কবি লেখক সাংবাদিক ও কাউন্সিলর শাহ সোহেল আমিন, মতিনুজ্জামান ও রাবিনা খান সহ ভালো কাজ করা বেশ ক’জন সাবেক কাউন্সিলর পরাজিত হয়েছেন।
কাউন্সিল নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পৌষালী হাওয়া বইতে শুরু করেছে লন্ডনে বসবাসরত বাঙ্গালী কমিউনিটি অধ্যুষিত আসন পপলার ও লাইম হাউজ আসনে।
পপলার ও লাইম হাউস আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সিলেটের সুনামগঞ্জের মেয়ে এবং বৃটেনের আলোচিত প্রথম হিজাবি বৃটিশ সাংসদ আপসানা বেগম।২০২৩ সালেে আবার অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই তার আসন থেকে তাকে সরিয়ে নতুন প্রার্থী হিসেবে অন্য কাউকে নির্বাচিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় লেবার পার্টির বাঙ্গালী সদস্যদের এক অংশ বর্তমান এম পি আপসানাকে চান কি না এ নিয়ে হ্যা/না ভোটের (ট্রিগার) আবেদন করেন।সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দল হ্যা/না ভোট (ট্রিগার) ঘোষণা করেছে।গত ৩১ মে সে আসেনর একটি ওয়ার্ডে প্রথম হ্যা/না ভোট(ট্রিগার) গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়া লেবার দলের মনোনীত প্রার্থী আপসানা বেগম জয়লাভ করে ছিলেন।তখনকার সে জয়লাভ করা ছিলো আপসানার কাছে খাড়া পর্বতশৃঙ্গ আরোহন করা কিংবা ৯ মাসের যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ অর্জনের থেকেও দূর্লভ।ঐ সময় তার বিরুদ্ধে ছিলেন লন্ডনের টাওয়ার হেমলেট কাউন্সিলের মেয়র সহ প্রায় সকল কাউন্সিলারগণ।এতোকিছুর পরেও আপসানা নির্বাচনে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।কিন্তু তার কিছু দিন যেতে না যেতেই শুরু হলো নতুন আরেক খেলা।তার উপরে করা হলো একটি জালিয়াতি মামলা। অনেক কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে শেষে প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট গড়িয়ে পরে ক্রাউন কোর্টের দেয়া আদেশে নির্দোষ প্রমানিত হন আপসানা।তার সে নির্দোষ প্রমানিত হওয়া ছিলো বাঙ্গালী জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষায় আরেক ভোরের সোনালী সূর্যোদয়।তা না হলে বাঙ্গালী জাতিসত্তার আকাশে কালো মেঘের ছায়া ছেয়ে যেত।
তার উপরে আবর এসে ছিলো কোভিড।
আপসানাকে সরিয়ে নতুন প্রার্থী মনোনীত করার পেছনে হিংসা এবং আঞ্চলিকতা দুটিই কাজ করছে।এমনটি চলতে থাকলে বাঙ্গালী হয়তো এ আসনটি হারিয়ে বসতে পারেন।দল সেখানে তাদের জাতি কাউকে নিয়ে আসতে পারে।
দু’পক্ষের সমর্থকদের অনেক গুলো অভিযোগ এবং অনেক যুক্তি ও রয়েছে এ নিয়ে।
অভিযোগ ঃ
১। আপসানাকে মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি কল রিসিভ করেন না।
২। তিনি সার্জারী করেন না।
৩। তাহার মাথা মোটা হয়ে গেছে।
৪। তিনি তার দলীয় সদস্য ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না ইত্যাদি ইত্যাদি।
অভিযোগের বিপরীতে যুক্তি তর্ক ঃ
১। আপসানার নির্বাচনী এলাকায় প্রায় লক্ষাধীকের মতন জনগন রয়েছেন।দৈনিক যদি ৫০০ জন জনগণ ফোনে কল করেন,তারমধ্যে অফিসিয়াল কাজ ও ফোনকল থাকে,তা হলে তিনি কতটা এবং কাদের ফোনকলে অগ্রাধিকার দেবেন?
২। কোভিডের কারণে সকল কিছু বন্ধ ছিলো।আইন অমান্য করে তিনি কিভাবে সার্জারী করতেন।এরপরেও তিনি ১০০ শত’র অধিক সার্জারী করেছেন।
৩। মাথা মোটাঃ এটা একটা অবাঞ্ছিত ও অশোভন প্রশ্ন।তিনি বিভিন্ন কারণে অবাধ চলাফেরা করতে পারেন না বিধায় এমনটি হয়।
[[ আপসানার কাজের তালিকাঃ
তিনি ইমেইল ও কাগজ-কলমে সর্বমোট ৫৬১৪৭ টি কেইস নিয়ে রীতিমত কাজ করেছেন।বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রয় ১০০’র কাছাকাছি বক্তৃতা দিয়েছেন জাতীয় সংসদে।৫৬২ টি সাইন করেছেন বিভিন্ন বিষয়ের উপর।এবং বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রী বরাবরে লিখেছেন ৪৭১ বার।]]
আবার আসি হ্যা/না (ট্রিগার) ভোটের কাছে।বৃটেনে আরো তিনজন লেবার দলীয় বাঙ্গালী এম পি রয়েছেন।সে আসনগুলোতে কেন কেউ প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না কিংবা হ্যা/না ভোটের জন্য আবেদন করেন না?
বৃটেনে যে কেউ চাইলে যে কোনো জায়গা থেকে নির্বাচনে প্রার্থিতা আবেদন করতে পারেন।সে সকল আসন গুলোতে দাড়াবার কি কারো কোনো সাহস নেই,না কি যোগ্যতার অপূর্ণতা রয়েছে।
দুপক্ষের সমর্থকদের যুক্তি তর্কের ফাঁক থেকে নেয়া প্রশ্ন ঃ
প্রশ্ন ঃ
বাকী তিনটা আসনের মধধ্যে দুটি বাদ দিয়ে শুধু বৌ-বেথনাল গ্রীন আসনের কথা বলি।এ আসনের এম পি দীর্ঘ এক যোগের ও বেশী সময় ধরে আছেনা।সখানে কেন প্রার্থী হতে কোনো বাঙ্গালী পুরুষ/মহিলার স্বপ্ন উদয় হয় না?
প্রশ্ন ঃ
বাঙ্গালী চার এম পি’র মধ্যে বাকী তিনজনের কাছে কি কেউ কখনো ফোনে কথা বলেছেন,ফোন করে দেখা করার সুযোগ নিয়েছিলেন?
প্রশ্নঃ
আপসানাকে যখন তখন যেথায় সেথায় দেখা যায়,পাওয়া যায়,বাকিদের কি কখনো দেখা গেছে, পাওয়া যায়?
প্রশ্ন ঃ
নির্বাচন এলে টিউলিপ এবং রুপাকে সহযোগিতা করতে বাঙ্গালী পাড়ার সকলেই মরিয়া হয়ে উঠেন।নির্বাচন পরবর্তী জয়ের পর তারা কি কখনো কারো সাথে বিশেষ ভাবে দেখা করেছেন?
বাঙ্গালী সমাজের কোনো বিপদ-আপদ কিংবা সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসেছেন?
তৃতীয় পক্ষের একজন শিক্ষক একজন আইনজীবী ও একজন সাধারণ বয়োবৃদ্ধের সাথে পৃথকভাবে কথা বললে তারা যুক্তি ধরেন একজন মেয়ে হয়ে মেয়েটি অনেক নির্যাতন নিপিড়ন সয়ে দিন পার করছে।সে যদি আরেক বার থাকে তাতে বাঙ্গালী সমাজের তো কোনো ক্ষতি হবেনা।
শিক্ষক বলেন আমার অনেক ছাএ ছাত্রী আছেন।যাদের অনেকেই রাস্থায় দেখলে সালাম দেয়া দূরে থাক মুখ তুলে পর্যন্ত তাকায় না।অনেক মুসলিম দেশের মেয়ে সাংসদ আছেন বৃটেনের জাতীয় সংসদে।যারা কোনোদিন পর্দা করার কথা বলছি না,অনেকেই শালীনতা পূর্ণ পোষাক পর্যন্ত পরে সংসদে আসেন না।কোনো মুসলিম দেশের পক্ষে বিপক্ষে কথা বলেন না।সে দিক বিবেচনায় আপসানা শুধু বাঙ্গালী নয় গোটা মুসলিম বিশ্বের অহংকার এবং হুংকার ও বলা যেতে পারে।
এই লেখাটি সম্পূর্ণ প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় পক্ষের মতামত।লেখকের কোনো মতামত নেই।
লেখক
এস এম শামসুর সুমেল
সাংবাদিক
সাংস্কৃতি কর্মী
লন্ডন
ইমেইল ঃ shamsursumel@yahoo.com