টাওয়ার হেমলেটসে লেবার পার্টির রাজনীতি আর বাংলাদেশী রাজনীতির পার্থক্য কি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৩:৫৫,অপরাহ্ন ২৭ জুন ২০২২ | সংবাদটি ৩৭৪ বার পঠিত
ব্রিটিশ রাজনীতির সাথে বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী মানুষের সম্পর্ক এখন আগের তুলনায় বেশ গতিময় এবং সুমধুর হয়ে উঠেছে।এক সময় ব্রিটিশ রাজনীতি নিয়ে বাংলাদেশী মানুষের কোনো আগ্রহ ছিলোনা।কিংবা তাদের জড়ানোর কোনো সুযোগ ও ছিলোনা।তখনকার মানুষ দেশীয় রাজনীতির লেজুড় নিয়ে টানাটানি করত।তখনকায় একটা প্রতিযোগিতা এবং অহংকারের বিষয়ও ছিলো বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলের পাদ পদবি নিয়ে।সংসার বৈরাগী হয়ে রাজনীতির মাঠে দৌড়ের ঘোড়া হতে গিয়ে অনেকের সংসার বৈরাগীর বাজারে নিলামেও উঠেছে।একসময়কার প্রতিযোগিতা এখন প্রতিহিংসার রূপ ধরেছে।আজকাল আর বৃটেনে বসবাসরত মানুষের মায়া মমতা আর ভালোবাসা এক সঙ্গে বসবাস করেনা তাদের দল ভিন্ন মত ভিন্ন বলে।এমনকি নিজের রক্ত সম্পর্কের আত্মিয় স্বজনের বিপদআপদে ও পাশে দাড়ায় না কেউ দেখেফেলবে বলে।এ সবকিছু মূলে রয়েছে বাংলাদেশী রাজনীতি।দেশীয় রাজনীতির কারণে আজ বৃটেনে গড়ে ওঠা যত পুরাতন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছ তার সব কটিতে আজ ফাটল ধরেছে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।তাও সেই বাংলাদেশী রাজনীতির কারণে।
বর্তমান সময়ে ব্রিটিশ রাজনীতিতে শুধু বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজনই নয় বৃটেনে জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা ছেলে মেয়েরাই জাতীয় রাজনীতির অংশ।তরুণ প্রজন্মের সেই সংখাটা ও এখন চোখে পড়ার মতন।এক দুই তিন করে আজ সে সংখ্যা সহশ্রের ঘর পাড়ি দিয়ে আজ অগুনিত সংখ্যায় রূপ নিয়েছে।বাঙ্গালী জাতিসত্তার জন্য সে এক মহা গৌরবের বিষয়।কিন্ত সে গৌরবের জলোচ্ছ্বাস তীর ছুঁয়ার আগেই ম্লান হয়ে যায় বাংলাদেশী নোংরা মনভাবের কারণে। যাদের কারণে এ জলোচ্ছ্বাস তাদের হাবভাব দেখে মনে হয় তাদের কেউই এ পদগুলোর জন্য উপযুক্ত নয়।তা দেখে কিছু যে একটা বলবো সে মন আর ভাষা দুটোই আমার মধ্যে উপস্থিত নেই।অনেক দিন অনেকগুলো লাইন লিখেও তা আবার বাদ দিয়ে দিয়েছি।কারণ তা নিজের জাতি বলে কথা।আমার লিখায় যদি আমার জাতির অপমান হয় সে বোধের কারণে।
আজ কদিন ধরে মনের গতি বেশ একটা ভালো নেই।দেশে বন্যা করেছে স্বজনেরা ভালো নেই বলে।তার মধ্যে আবার মনে বার বার উঠানামা করছে বৃটিশ রাজনীতিতে বাংলাদেশী নেতাদের আচরণের কথা।আমি যতবার বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার কথা ভাবি ঠিক ততবারই বিবেক আমাকে স্বরণ করিয়ে দেয় স্বজনপ্রীতির কথা।কিংবা অন্যায় যে করে আর প্রতিবাদ না করে যে সহে তারা দু’জনেই সম-অপরাধী।আর তারচেয়ে ও বেশি অপরাধী সে,যে পাশে বসে দেখেও কোনো প্রতিবাদ করেনা।
বাংলায় বেহায়া বলে একটি কটুবাক্য আছে।যার লাজ লজ্জা হায়াশরম বলে কিছুই থাকে না।তাকে এক কথায় বেহায়া বলে।বাক্যটি আসলে শুধু বাংলাতেই নয় সকল দেশের সকল ভাষাতেই তা বহুল ব্যাবহৃত।
আমার মনে হয় আমিও সেই বেহায়া বাক্যের বাতাসচক্রে বিলীন হয়ে আছি।আর কেনো মনে হয় তা বলছি।
আমি বেশ কদিন থেকে বৃটেনের রাজনীতি নিয়ে বলছি।আমি বলছি তো বলেই যাচ্ছি বিরামহীন।সত্যিবলতে কি, নদীর তীরে,রাস্তার পাশে বসে যে লোকটি লুঙ্গি দিয়ে মুখ ঢেকে উলঙ্গ হয়ে জরুরী কাজ সারে তার কোনো লাজ লজ্জা হায়াশরম থাকে না।লাজ লজ্জার যত মাথা খায়,যারা তাদের দূর থেকে দেখেন।
আসছি বৃটেনের রাজনীতি নিয়ে।রাজনীতিতে বাঙ্গালী নেতাদের হাবভাব নিয়ে বলছি।
ছোটবেলায় শিক্ষকদের কাছে কিংবা শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন সভায় সেখানে শুনেছি বক্তারা বলেছেন শ্রেনী কক্ষে অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রী সকল সময়ই দেয়াল ঘেঁসে পেছনের সারিতে বসেন।প্রথম সারিতে বসেন সকল মনযোগী ছাত্র ছাত্রী।আর মধ্য সারিত বসেন মধ্যবিত্ত মনযোগীরা।লেখাপড়া শেষে একজন ভালো ছাত্র ছাত্রী বড়ো জোর হয় ডাক্তার না হয় ইঞ্জিনিয়ার। মধ্যমনযোগীরা হয় শিক্ষক কিংবা ১ম,২য় সারির সরকারী কর্মকর্তা।আর দেয়াল ঘেঁসে বসা সেই সকল বালকেরা সবশেষে নিয়ে যায় উপরের সকলের দ্বায়িত্ব।তারা হয়ে ওঠেন সকল কাজের কাজী।তারা দখল করে নেয় রাজনীতির মাঠ।সব মিলিয়ে তারাই সফল এবং তারাই দেশ ও দশের অভিভাবক।
যদিওবা প্রবাদ আছে রাজনীতিতে এসে সব সময় সফল হয়েছেন পেছনের সারীর সেই লোকগুলো।যারা শ্রেণিকক্ষে পেছনের সারিতে বসতেন। কিন্তু বৃটেনের রাজনীতির চিত্র বলে অন্য কথা।এখানে শুধু পেছনের অমনোযোগীরাই নয় যুক্ত হয়েছেন [ গো সেটি বেগম,মির জাফর,জগৎ সেট, রাজবল্লভ] চরিত্রের অধিকারী কিছু নেতা।
ব্রিটিশ রাজনীতিকে বাঙ্গালীদের কাছে কঠিন এবং জালের মতন পেঁচিয়ে রেখেছেন কিছু বাংলাদেশী নেতা।যে কারণে বাংলাদেশী নেতাদের কাছে আগামীর বৃটিশ রাজনীতি ঘোর অন্ধকারে পাহাড়ি পথ হাঁটার মতন কঠিন হয়ে পড়বে।যার ফলে এদেশে জন্ম নেয়া ছেলেমেয়েরা রাজনীতি থেকে সরে দাড়াতে পারে,নয়তো তারাও দূর্নীতির সঙ্গে লিপ্ত হতে পারেন।
ব্রিটিশ রাজনীতিকে বাংলাদেশী ব্রিটিশ রাজনৈতিকদের কাছে অন্ধকার কালো ঘরে পরিচিত করতে যে সকল বাঙ্গালী নেতাদের অগ্রণী ভূমিকা লোক মুখে ফুটে উঠেছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হলো সাবেক কয়েক বারের কাউন্সিলর হেলাল আব্বাস।যার কারণে লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটের লেবার পার্টি সহ রাজনীতির ধারাবাহিকতা জরাজীর্ণ হয়ে আছে।তার হাতকে শক্তিশালী করতে এখন যুক্ত হয়েছেন জর্জ গেলোওয়ের বিলোপ্ত দল রেসপেক্ট পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর এবং বর্তমান লেবার পার্টির সদস্য মামুনুর রশীদ ( যিনি আম্মা বাদ রাসুলে করিম নামেও লেবার পার্টির লোকেদের কাছে পরিচিত),বর্তনান কাউন্সিলর এবং দলের সার্থ ভুলে নিজের সার্থ দেখ একক প্রচার প্রচারণাকারী ফারুক আহমদ যিনি ইয়েস স্যার নমে ও পরিচিত,লেবার দলের দলী হুইপ ভঙ্গের কারণে পদ হারানো সাবেক কাউন্সিলর মাইজ ভান্ডারী খেতাব প্রাপ্ত পুরু মিয়া, সহ আরো অনেকের নাম বাতাসে ভাসে।
বৃটেনের জাতীয় রাজনীতিতে অসংখ্য রাজনৈতিক দল রয়েছে।তার মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা যে কয়টি দলের সাথে বাঙ্গালী মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি,এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দল কনজার্ভেটিভ,লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (লিভডেম)সহ আরো দু-একটি দল।এ সকল দলের অসংখ্য সদস্য সমর্থক রয়েছেন বাংলাদেশী।
লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস এলাকাটি একটি বাঙ্গালী ঘনবসতি এলাকা।যে কারণে এখানে সব থেকে বেশি বাঙ্গালী সদস্য এবং সমর্থক রয়েছেন লেবার পার্টিতে।দলটিতে বাঙ্গালীদের আবির্ভাবের শুরুর দিকে কম শিক্ষিত এবং তারা সংখ্যায় কম হলেও তাদের সততা,সাহস এবং নেতা হবার কিংবা নেতৃত্ব দেবার মতন যোগ্যতা ছিলো প্রাখর তখনকার সেই মানুষগুলোর ।তারা রক্ত,ঘাম,শ্রম এবং পকেটের টাকা দিয়ে আজকের এই বাঙ্গালী সম্প্রদায় তথা লেবার পার্টিতে অবস্থান করেছেন।তারা বর্তমান সময়ের নেতাদের মতন নিজেকে বিক্রি করে দিতেন না। আজ দলটিতে বাঙ্গালী অদ্যুসিত লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটসে বাঙ্গালী সদস্য এবং সমর্থকে কানায় কানায় পূর্ণ।লন্ডন শহর ও তার আসপাশের সকল টাউনে ও বাঙ্গালী সদস্য কিংবা সমর্থকদের কমতি নেই।তাতে কি হবে।বাংলায় একটি প্রবাদ আছে,”বেশ পুতে বাপ নির্বংশ”।এ সকল সদস্যদের বেশির ভাগই দালালদের কেনা পণ্যের সমান।নেতা কিংবা কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার জন্য পদলোভী কিছু লোক নিজের পকেট থেকে পয়সা দিয়ে কিংবা প্রভাবিত করে এসকল লোকেদের দলের সদস্য করেছেন।সে সকল সদস্যরা তাদের কথিত নেতা যা ভালো বলেব তারা তাকেই ভালো মনে করেন।তাদের নিজেদের কোনো বোধ কিংবা ঘ্রাণ শক্তি নেই।এই ধাঁচের নেতা লোকেরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য নিজের জাতি কেনো বাংলা ছায়া ছবির ন্যায় ঘরের বধুকেও বিক্রি করতে পিছপা হয়না।এরা সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় অনেকে অনেক কিছুই করতে পারেন।তারা যেখানে গেছেন সেখানেই জটলা পাকিয়ে বেরিয়ে এসেছেন।
কনজার্ভেটিভ (টোরি)পার্টিতে যারা সদস্য পদ লাভ করেছেন তাদের প্রায় সকল সদস্যই যোগ্য এবং তারা দলীয় নিয়ম নীতি কিংবা রাজনীতি বুঝেন।এ দলটিতে জী স্যার না স্যার প্রকৃতির কোনো সদস্য নেই।তারা কখনো দলের বাহিরে কাজ করেন না।
আমার কথা গুলো বেশ আড়ষ্ট এবং কটুবাক্যে রূপ নিয়েছে তা আমিও বুঝতে পারছি।তবে কেন বলছি তা শুনলে আপনাদের ও মন পুড়বে।
বিগত দিনে হয়ে যাওয়া নির্বাচন,বৃটিশ রাজনীতিতে বাংলাদেশী নিয়মে ওলটপালট,দলছুট সহ চরিতার্থ হওয়া কিছু চরিত্র আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
বৃটেনের জাতীয় সংসদে সর্বমোট ৬৫০ টি আসন রয়েছে।তার মধ্যে ৬৪৯ টি আসনের সবকটি আসনই বর্তমান সংসদ সদস্যকে পুনঃ নির্বাচিত করবেন না কি বদলি করবেন তাই হ্যা/না ভোট (ট্রিগার)করা হয়েছে।এবং তা এক সপ্তাহের ভেতরেই শেষ হয়েছে।কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বর্তমান নেতাকেই বহাল তবিয়তে রাখতে চান লেবার দলের সদস্যগণ।শুধু একটি আসন ছাড়া।এক মাত্র লন্ডনের পপলার ও লাইম হাউস আসনের বেলায় তা ভিন্ন।কেনো এমনটি হতে হবে পপলার লাইম হাউস আসনে?
এ আসনের এমপি এমন কিছু তো খারাপ করননি যে,সে কারণে তাকে সরাতে হবে।
কে কাকে সরালো কে কাকে রাখলো তাতে কিছু যায় আসেনা সাধারণ জনগনের।তারা চায় একজন বাংলাদেশী থাকলেই চলবে।কিন্তু সেই জনগণের মনকে বিষিয়ে তুলেছেন টাওয়ার হেমলেটসের কতিপয় দুষ্ট প্রকৃতির নেতা।সেই সকল নেতারা চান গণতন্ত্র।তাই তারা হিংসার সাজোয়া যান সাজিয়ে মাঠে নেমেছেন পপলার লাইম হাউসের এমপি আপসানা বেগমকে সরানোর সংগ্রামে।নেতারা যে হিংসাতান্ত্রিক পথে গনতন্ত্রের উদ্ধার কার্য পরিচালনা করছেন সে পথ কি আসলেই সঠিক? এখামে একটি প্রশ্ন আসে।যদি এই গনতন্ত্র উদ্ধার কার্য সঠিক হয় তবে একটি মাত্র আসনে কেন?কেন দলের সাথে কথা বলে সবকটি আসনে সমান ভাবে উদ্ধার কার্য পরিচালনা করা হয় না?আরো প্রশ্ন উঠেছে জনমনে,নেতারা আপসানা হঠাও আন্দোলনে মাঠে নেমেছেন,সে ভালো কথা।ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ধর্নাদিয়ে তাদের কান বিষিয়ে তুলেছেন ব্যাক্তি আপসানা বিরোধী কান মন্ত্র শুনিয়ে।একই সময়ে বোও বেথনাল গ্রীন আসনের এমপি রুশনারা আলীর পক্ষে কাজ কর যাচ্ছছেন তারা।প্রশ্ন হলো এর নাম কি গনতন্ত্র রক্ষা? আপসানা বেগম এবং রুশনারা আলী দুজনেই একই দলের এমপি হলেও দুজনের পথ চলা দুটি মূল মন্ত্রে।তাদের একজনের পথ চলা ডানে আর অন্যজনের বাঁয়ে।এখানেও একটি প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।আপসানা যেখানে মিটিং করেন রুশনারা কেনো একই সময়ে সেখানে মিটিং করতে যাবেন?তাহলে কি রুশনারা আলী আপসানার বিরুদ্ধে কাজ করছেন? এমন প্রশ্ন যে কারো মনে আসতেই পারে, আসাটা স্বাভাবিক।
লোকে বলে আপসানা বেগম তার পরামর্শ দাতাদের ভুল পরামর্শে চলায় তার পথ এমন কাটাময়।লোকে যা বলে তা ভুল বলেনি।তার কিছুটাতো সত্যি হবে।আপসানা বেগমের এমন জনগন বিমুখ হওয়া কিংবা (ট্রিগারে) হ্যা/না ভোটে হেরে যাওয়া সবকিছুর কারণ তার ব্যাক্তিগত পরামর্শ দাতাগোষ্ঠী।মানুষ ভুলের উর্ধে নয়।আপসানা বেগম ও ভুল করতে পারেন।তাকে তার নির্বাচনী এলাকার নেতারা শোধরানোর সুব্যবস্থা করে চেষ্টা করতে পারতেন।তা না করে তারা কি করলেন?ট্রিগার ডেকে খাল কেটে কুমির আনলেন পুকুরে।এই কাজটি করতে গিয়ে নেতারা যে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ঠিক ঐ ভাবে যদি গত কাউন্সিল নির্বাচনে শ্রম দিতে পারতেন তাহলে কিন্তু লেবার পার্টির প্রার্থী নির্বাচনে হারতো না।আস্পায়ার পার্টি তথা লুৎফুর রহমান জয়লাভ করতেন না।
আপসানার পরামর্শ দাতাগোষ্ঠী যদি সত্যি এমন হোন।”বানরের গলায় মুক্তোর মালা।কিংবা ধান ক্ষেতের বেড়ায় ষাড় বেঁধে রাখা।” গল্পের মতন তবে এমন প্রকৃতির লোকেদের বাদ দিয়ে ভালো লোক নিয়োগ দেয়াই তার জন্য উত্তম।তার এমন পরামর্শকদের ভুল পরামর্শে তিনি আরো নিম্নগামী হতে পারেন।
লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটসএ রেসপেক্ট পার্টি গঠন অতঃপর জর্জ গেলোওয়ের এমপি হয়ে আসার মধ্য দিয়ে বাঙ্গালী নেতাদের নেতৃত্বে আসার পথ সুগম হয়ে এসেছিলো।সে সময় বেশ ক’জন কাউন্সিলর ও হয়েছিলেন বাঙ্গালী।রেসপেক্ট পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি জর্জ গেলোওয়ে যখন সরে দাঁড়ালেন তখনই সুযোগ এসেছিলো বাঙ্গালী এমপি হবার।আর বাঙ্গালী নেতারাও তখন বহু কষ্ট করে রোদ বৃষ্টি ঝড় পোহায়ে সেই সোনার হরিণ ধরতে সক্ষম হয়ে ছিলেন।এই সুযোগ জর্জ ই করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু দূঃখের বিষয় ছিলো তখনকায় বাংলাদেশী যারা রেসপেক্ট পার্টি থেকে টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন কিংবা রাজনীতিতে এসেছিলেন গেলোওয়ে সরে যাওয়ার পর অনেকেরই কপাল তখন গেলোওয়ে যেমন দাউদাউ করে জ্বলে উঠে আবার ধপাস করে নিবে গিয়েছিলেন ঠিক তেমনি করে তাদের কপাল ও পুড়ে ছাই হয়েছিল।আর সেই থেকে শুরু হলো টাওয়ার হেমলেটসের রাজনীতিতে বাঙ্গালী বসন্তের কোকিলদের দলছুট আর চামচামি চামচামি খেলা।
মূলত সেই থেকেই শুরু হলো টাওয়ার হেমলেটসের রাজনীতিতে বাঙ্গালী নেতাদের পদচারণা।তারই ধারাবাহিকতায় এমপি হয়ে আসেন রুশনারা আলী।কাইন্সিল লিডার থেকে মেয়র হয়ে আসেন লুৎফুর রহমান।
বৃটিশ রাজনীতিতে বাঙ্গালী বহু নেতা নেত্রীর উদয়াস্ত হয়েছে।লুৎফুর ২য় বার মেয়র হয়ে আসার পরপরই তার উপরে বেশ কয়টি মামলা করে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিলো। টানা ২ দুই বার তিনি নির্বাচন করতে পারেন নি।তাকেও সরানোর পেছনে হেলাল আব্বাস’র পাকা হাত কাজ করেছিলো।লুৎফুর মেয়র থাকাকালীন সময়ে ২০১০ সালে পবিত্র মক্কা নগরীর ইমাম লন্ডন সফরে আসলে তাকে নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেছিলেন। তখন আব্বাস রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবার লক্ষ্যে মক্কার ইমাম ধর্ম ও লুৎফুরকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন হেলাল আব্বাস।যদিও আব্বাস একজন বাংলাদেশী এবং মুসলিম।
লুৎফুর রহমান আবার মেয়র হয়েছেন,রুশনারা আলী আছেন বহাল তবিয়তে।টানা ৪ বারের মনত চলছে তার শাসনআমল।আরো চলবে।
এধারা চলুক সকলেই চায়।রুশনারা আলী যদিও বাঙ্গালী জাতিসত্তার দোহাই এবং সহানুভূতি নিয়ে ভোটে ফাস করেন।তবে তার পরবর্তীতে তাকে আর কোন কিছুর ধারে কাছে দেখা যায়না।তিনি তার এ দীর্ঘ আমলে এমন কিছুই করেননি যা জাতি হিসেবে বাঙ্গালীর মাথা উচু করবে।কিংবা পরবর্তী আগন্তুক পথিকদের রাস্তায় মাইল ফলক হয়ে এক পায়ে দাড়িয়ে থেকে পথের দিশা দেবে।
তার পর বাংলাদেশী বংশধর একে একে আরো তিনজনই মহিলা এমপি হয়ে বৃটিশ সংসদে আছেন।একজন তো বাংলা ও বাংলাদেশ নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। আর একজনের কোনো খবরই নেই বাংলা এবং বাঙ্গালীর অস্তিত্ব নিয়ে।নতুন আসা এমপির কাজ কর্ম তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমান।তাকে সরাতে আব্বাস,মামুন,পুরু,ফারুক পরিষদ ২০১৯ সালেও ছিলেন সক্রিয়। এবং এখনও আছেন,তবে এবার আরো শক্ত হাতে নতুন রূপে।
মূল কথায় আসি।গনতন্ত্র তাকেই বলে,যেখানে সবার অধিকার হবে সমান।বৃটেনে বসে বৃটেনের খেয়ে পরে যদি বাংলাদেশের গন পরিবারতন্ত্রের নীতিতে একজনকে পারে টেনে আর অন্যজনকে গর্তে ঠেলে গনতন্ত্র চর্চা করা হয় তবে সে চর্চা নিতান্তই নিম্নমানের।তা থেকে ভালো কিছু আশা করা যায়না।এমন গণতন্ত্র চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।তা না হলে যেমন ভালো গনতন্ত্র চর্চা করা যায় না তেমনি ভালো নেতা হওয়া ও যাবে না।
লেখক
এস এম শামসুর সুমেল
সাংবাদিক
সাংস্কৃতি কর্মী
লন্ডন
ইমেইল ঃ shamsursumel@yahoo.com